কলমে শুভশ্রী মৈত্র
ইংরাজিতে ‘Optical Illusion’ বলে একটি শব্দ আছে। বিষয়টা কিছুটা এইরকম যে, একটা ছবি এমন ভাবে তোলা হল যা দেখে আপাতদৃষ্টিতে একরকম মনে হলেও একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে প্রথম দর্শনে যা মনে হলো ছবির বিষয়টা আদতে একেবারেই আলাদা।
যেমন, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল একটি অভিযোগ তুলেছেন যে, কলকাতা পুলিশের ডিসি সাউথ আকাশ মাঘারিয়া(আইপিএস) তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন। অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে একটি ছবিও দিয়েছেন তিনি। জি 24 ঘন্টার প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি সামনে এসেছে, তবে তাঁরাও ছবিটি বিজেপি সূত্রে পেয়েছেন সেকথা উল্লেখ করেছেন। এখন প্রশ্ন বিজেপির যে সূত্র ছবিটি তুলেছেন, তিনি কি জানতেন যে এই রকম একটি অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ক্যামেরার ‘Angle’ ঠিক কেমন হলে প্রয়োজনীয় ছবিটি পাওয়া যাবে!
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই প্রার্থীকে, আশা করবো তিনি বা তাঁর দল নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দায়বদ্ধ -একথা তাঁরা মনে রাখবেন।
প্রথমত, যে ছবি সামনে এসেছে তাতে ডিসি সাউথ যে মহিলা প্রার্থীর হাত ধরেছেন তা অন্তত আমার চোখে পড়েনি বরং মনে হয়েছে ওই একই ছবি যদি প্রার্থীর পিছন দিক থেকে তোলা হতো তাহলে এই অভিযোগে হয়তো অভিযুক্ত হতেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত CISF কর্মী। পিছন থেকে ছবিটি তুললে মনে হত তিনি হয়ত প্রার্থীর পিঠে হাত দিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, কেন একটাই স্টিল ছবি? ভিডিও নয় কেন? দিনের আলোয় ভবানীপুরের রাস্তায় এমন একটি হাই প্রোফাইল কেন্দ্রে প্রার্থীর শ্লীলতাহানি! তা শুধু একটি ছবি দিয়েই প্রমাণ করতে হচ্ছে? অন ডিউটি একজন পুলিশ আধিকারিক যখন রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাট সামলাতে ব্যতিব্যস্ত তখন তাঁর ‘শ্লীলতাহানি’ করার ইচ্ছে জাগবে? সত্যিই উত্তর টা জানা নেই আমার।
‘শ্লীলতাহানি’-র মত একটি গুরুতর অভিযোগকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে যারা ব্যবহার করেন তাঁরা রাজ্য বা দেশের ভাল কতোটা চাইবেন সে তো অনেক দূরের বিষয়, তবে নির্দ্বিধায় এটা বলা যায় এই ধরণের অভিযোগ (উদ্দেশ্য প্রণোদিত) আসলে যারা শ্লীলতাহানির শিকার তাঁদের ‘জাস্টিস’ পাওয়াটা অনেক পিছিয়ে দেয়।
অনেকেরই মনে আছে , ‘Jasleen Kaur harassment case’, এর কথা মামলার ৪ বছর পরে আদালতে প্রমাণিত হয় অভিযুক্ত সর্বজিত সিং নির্দোষ। কিন্তু ততদিনে মিডিয়া ট্রায়ালে তাঁর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে কিভাবে? মনে রাখা প্রয়োজন এই মামলার রায় বেরোনোর পরে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়েছিল একটাই দাবিতে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অর্ণব গোস্বামী সহ সকলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। উল্লেখ্য, অভিযোগকারিণী এক্ষেত্রেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আম আদমি পার্টির কর্মী ছিলেন জসলীন কাউর। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আর কতদিন নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘শ্লীলতাহানি’-র মত একটি গুরুতর অপরাধকে ক্রমশ লঘু করে দেবেন!
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584