নিউজ ফ্রন্ট,ঘাটালঃ
ঘাটালের বীর সন্তান সামসু আলম বা এস এস আলম।পড়াশোনা আক্ষরিক অর্থে নেই,তবে আছে অভিজ্ঞতা।এস এস আলম আসলে একজন সফল স্বর্ন ব্যবসায়ী। তাঁর স্বর্ন ব্যবসা পৃথিবীর প্রতিটি নামজাদা শহরে ছড়িয়ে।জেলা রাজ্য ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে এস এস আলম এখন আন্তর্জাতিক আইকন।এত উন্নতি এত অর্থ তবুও মাটির সাথে অবাধ যোগাযোগ আলম সাহেবের।মানুষের দুর্দিনে তিনি সবসময় নিজের শ্রম অর্থ উজাড় করে দিয়েছেন।গঠন করেছেন আলম চ্যারিটেবল ট্রাস্ট।২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় এই ট্রাস্টের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কীভাবে হত তা কেউ এখন আর কল্পনা করতে পারবে না। টানা এক মাস প্রায় ৫০ টি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বন্যা দুর্গতদের ক্ষুধা নিবারণ করেছে এই ট্রাস্ট।সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষদেরও তিনি শারিরীক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করেছেন।লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তাদের জন্য প্রতিবন্ধী সহায়ক সামগ্রী বিনামূল্যে দিয়েছেন।এভাবে সমাজের সার্বিক উন্নয়নে নিজের ব্যাবসায়িক সাফল্যকে তিনি ব্যবহার করেছেন।এবার তাঁর ভাবনা এক অন্য মাত্রা পেল।২৪ নভেম্বর বাংলা একাদেমির সভাগৃহে তাঁর লেখা দুটি বই প্রকাশিত হল,বই দুটির নাম যথাক্রমে ‘বিজনেসম্যান অফ দ্য ইয়ার’ এবং ‘মনের কথা’।প্রথম বইটি উপন্যাস হলেও, প্রকাশকের তরফ থেকে একে মোটিভেশনাল বই বলেই পরিচয় করানো হল। বই দুটির লেখক এস এস আলম।আলমের দুটি বই থেকে প্রাপ্ত অর্থ সামাজিক কাজেই তিনি ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন আলম সাহেম।
জোড়া বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক নামজাদা ব্যক্তিত্ব।ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা কলম পত্রিকার সম্পাদক ইমরান আহমেদ, ছিলেন লেখক জাহিরুল হাসান, প্রচেত গুপ্ত, শামিম আহমেদ প্রমুখ। ছিলেন কবি সুবোধ সরকারও, পরিচয়দান পর্বে সঞ্চালক ছিলেন ক্যাকটাস খ্যাত গায়ক সিধু ও আরও অন্যান্য।আলম সাহেবের এ গন্তব্য বড় সহজ ছিল না।চটকল মজদুরের সন্তান আলম বাবার কর্মহীনতার পরে যখন বাড়ি ছাড়েন,তখন তাঁর বয়স ১১ বছর। পৌঁছে যান মুম্বইয়ে।পড়াশোনা চালাবার সাধ্য ছিল না তাঁর।সভায় আলম বলেন, খিদের জ্বালায় লঙ্গরখানার মত জায়গায় লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দু-একবার। কিন্তু, লাইন এগোতে এগোতে আর যখন দুই বা তিনজন বাকি, সে সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল, ‘‘ভিক্ষা নেব না, আমার তো সব আছে, তাহলে কেন?’’ এই কেন প্রশ্নই তাঁকে পরবর্তী বছরগুলোতে পরিশ্রমমুখী করে তোলে,করে তোলে হাজার জনেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানকারী এক ব্যবসায়ী।ভারি কণ্ঠে এস এস আলম বলেন,‘‘আমি কখনও ভাবি নি আমার বই প্রকাশ হবে,’’ খুবই কুণ্ঠিত শোনায় আলমের গলা। কিন্তু প্রায় পরক্ষণেই সে কণ্ঠে দৃঢ় হয়, যখন তিনি জানান, কলকাতার সিঁথিতে গোল্ড পার্ক তৈরি করবে তাঁর সংস্থা।মুম্বইয়ে গিয়ে তিনি সোনার কাজ শেখেন,কাজ শিখতে চলে যান দাদরা নগর হাভেলীতেও।সেখান থেকে চেন্নাই।চেন্নাইয়ে যখন তিনি ট্রেন থেকে নামেন,তখন তাঁর বয়স ২০, পকেটে সম্বল ৩০ টাকা।আর এখন? আলম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও স্টোরে সোনার চেন কিনলে আমার সংস্থার চেন পাবেন।আমি পশ্চিমবঙ্গে একক প্রচেষ্টায় জুয়েলারি পার্ক তৈরি করছি সিঁথির মোড়ে।নাম হবে স্বর্ণশিল্পী।এটা ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প।এখানে এক ছাদের নিচে কাজ করবেন ১০ হাজার স্বর্ণকার।তাঁরা সেখানে সমস্ত রকম সুযোগসুবিধা পাবেন।”
বই দুটি লেখার পেছনেও আছে আলমের সামাজিক দায়বদ্ধতা।তিনি সমাজের কর্মঠ বেকার যুবকদের চাকরির উপর ভরসা করতে মানা করছেন বই দুটিতে।‘বিজনেসম্যান অফ দ্য ইয়ার’ লেখার পিছনে তাঁর যে ভাবনা কাজ করেছে, আলম বলছিলেন, ‘‘দিশাহীন যুব সমাজের সরকারমুখীনতা”। আলমের কথায়, ‘‘সবাই যদি সরকারের দিকেই তাকিয়ে থাকে, তাহলে কী করে চলবে?রাজ্যের চার কোটি কর্মহীন যুবক যুবতীকে দিশা দেওয়া আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করেছি।’’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584