গতকাল প্রেস ক্লাবে আশিসদার স্মরণ সভায় গিয়েছিলাম। খবর পাওয়ার পরই দ্রুত তৎপর হয়ে প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহভাজন স্নেহাশিস শূর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক যেভাবে এই স্মরণ সভার আয়োজন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ইতিমধ্যেই তাদের উদ্যোগে ক্লাবের তরফে আশিসদার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সবরকম সহায়তার। এটাই বড় দরকার। কাজ কতটা হবে সেটাতো পরের কথা, পাশে থাকার আশ্বাসেই অসহায় বা অসুস্থ সতীর্থরা বল পায়। প্রয়াতদের পরিবার আশ্বস্ত হয়।
আরেকটা জিনিসও ভাল লাগল আমার। আশিসদার সঙ্গেই আমার আরেক সতীর্থ কালান্তর পত্রিকার সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক দিলীপ ঘোষ চৌধুরী এবং ক্লাবের তরুণ কর্মী কৃষ্ণ প্রামাণিকের (নন্দ) ও স্মরণ সভা ছিল। দিলীপদার সঙ্গে অনেক অ্যাসাইনমেন্ট করেছি। অভিজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক। নন্দ-র কথা ভেবে খারাপ লাগছে। খুবই অল্প বয়সে চলে গেল ও, ক্লাবে গেলেই হাসি মুখে এগিয়ে আসতো। দুজনের পরিবারকেই সমবেদনা জানাই।
সমবেদনা তো জানাতেই হবে, তা না হলে আমরা আর মানুষ হলাম কেন? কিন্তু সমবেদনার পাশাপাশি আমাদের প্রয়াত ও অসুস্থ কিংবা হঠাৎ দুর্ঘটনাগ্রস্থ সহকর্মী ও সতীর্থদের সহায়তা, চিকিৎসা ও পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। আমার অনুজপ্রতীম স্নেহাশিস এবং কিংশুক এ ব্যাপারে ভাবছে। আন্তরিক চেষ্টার মধ্যে দিয়ে ওরা নিশ্চয়ই কোন উপযুক্ত পন্থা খুঁজে বার করতে পারবে। সবরকম সহায়তার জন্য আমার মত সামান্য লোকেরা তো রইলামই।
একটা কথা বুঝতে হবে, আমাদের পেশাগত চাপ কিন্তু দিনদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে দুর্বল হচ্ছে সুরক্ষা। শুনতে খারাপ লাগলেও কর্মস্থল ও সবসময় সব সাংবাদিকদের উপযুক্ত সুরক্ষা দেয় না। তাই অসুস্থ সাংবাদিকদের চিকিৎসা, জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রয়োজনে নিখরচায় চিকিৎসা,ওষুধ ও রক্ত ইত্যাদি পরিষেবা দেবার কথা ভাবতে পারি আমরা। এসব পাওয়ার জন্য ক্লাব একটা হেলথ কার্ড দেবারও ব্যবস্থা করতে পারে। এসবই আমার ব্যক্তিগত মতামত, স্নেহাশিস, কিংশুকরা নিশ্চয়ই আরও ভাল কিছু পরিষেবা দেবার কথা ভাবতে পারবে।
এটাই সবচেয়ে জরুরি। দিদি সাংবাদিকদের পেনশনের ব্যবস্থা করে দলমত নির্বিশেষে রাজ্যের সব সাংবাদিকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সরকারের এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের কমিউনিটিরও কিছু উদ্যোগ জরুরি। প্রেস ক্লাবই হয়ে উঠতে পারে সেই উদ্যোগের মুখ। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু করতেই পারেন, কিন্তু তারও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। সমষ্টিগত প্রয়াস সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে। ক্লাব অসুস্থ, প্রবীণ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সাংবাদিকদের খোঁজখবর রাখার জন্য একটা কমিটি গঠন করতে পারে। ক্লাবের সুপারিশ, মতামত অনুযায়ী এদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিষেবার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে পারেন তারা।
অনেকে বলেন তারা ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য ওর জন্য করেছেন খুব ভাল কথা, কিন্তু এটা সভায় বুক বাজিয়ে বলার মত কোন ব্যাপার নয়। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে এমনিতে সপ্রতিভ সাংবাদিকরা কিন্তু সাধারণ ভাবে নিজেদের প্রয়োজন ও সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। অথচ তাদের জীবনের সমস্যা ও প্রয়োজন মোটেই কম নয়। তাই আমাদেরই তা নিয়মিত জানার মত একটা মেক্যানিজম তৈরি করতে হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584