তাপস দাস,
” সুরজাহান, তানজিলা ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফিরেছে। অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে বারবার সুরজাহানের চোখ দুটি ছলছল করে উঠেছিল।- হ্যাঁ ওর জুতোর অর্ডার দিয়েছি। কিন্তু এখনো হাতে পাইনি। তাই বিনা জুতোয় হত দরিদ্র মেয়েটি ভালোই চেষ্টা চালিয়েছে।… একটা ভালো সাইকেল জোগাড় করে দিতে পারলে আর ভালো অনুশীলন এর সুযোগ পেলে হয়ত চিত্রটা বদলে যেত।…….. মন্দির মসজিদ আর গির্জায় পুণ্যের লোভে মানুষ থরে থরে টাকা ঢালে, কিন্তু অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে হাত কাঁপে। কোটি কোটি সরকারি টাকা তছরুপ হয় আর আমাদের দেশে অনাহারে না মরলে খবর হয় না।…… হ্যাঁ ভারতবর্ষ বলে আমরা নিজেদের কপাল চাপড়ানোর দলে নই। আমাদের লড়াইটা আমরাই লড়বো।”-লিখেছেন মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গার্লস হাই মাদ্রাসার দিদিমণি। কোনিদের অদম্য স্পর্ধার কাহিনী।
সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ে শরিয়তি আইন না মেনে ছেলেদের মত প্যান্ট পরে সাইকেল চালাবে? এমন বেয়াদপি চলবে না। মেয়েদের বিয়ে হবে কেমন করে। ছুটে গেছেন কোনিদের ট্রেনর। ছাত্রীদের মা বাবা অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন সানিয়া মির্জাও মুসলমান। সেও খেলে। আফগানিস্তানেও মেয়েরা খেলে। লড়েছেন অসম যুদ্ধ। জিতেছেন। শেষ পর্যন্ত অচলায়তন ভেঙ্গেছে। সুরজাহান তানজিলা সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে জেলা, রাজ্য অতিক্রম করে পৌঁছে গেছে ন্যাশনাল সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপে। দিদিমণি ক্রমাগত বলেছেন ফাইট কোনি ফাইট।
ছাত্রীরা তাঁর আত্মজা। এমটাই ভাবেন তিনি ছকের বাইরে। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভেবেছেন। সেল্ফ কনফিডেন্স বিল্ড আপের জন্য বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ পদক জেতা ট্রেনারের অধীনে ছা্ত্রীদের ক্যারাটে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর মাদ্রাসার চারটি ক্ষুদে মেয়ে অনূর্ধ্ব চৌদ্দ রাজ্য মহিলা কবাডি টিমের সদস্য। মেয়েদের বোরখায় মুখ লুকোতে দেননি। হিজাবের বদলে দিয়েছেন জার্সি। ক্লাস সিক্সের মিষ্টি মেয়েটি পরীক্ষা দিতে আসেনি। দিদিমণি পৌঁছে গেছেন ছাত্রীর বাড়িতে। গিয়ে দেখেন। ফুটফুটে নাবালিকা মেয়েটির বিয়ের আয়োজন খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে। দিদিমণি মা বাবাকে বুঝিয়েছেন। বিয়ে আটকেছেন। সেই মেয়েটি এবার মাধ্যমিকে। মাদ্রাসার সম্ভাবনাময়ী ছাত্রী। মুর্শিদা খাতুন বেলডাঙ্গা দেবকুণ্ডু সেখ আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা। ২০১০ সালে স্কুলের চাকরি ছেড়ে অনেককেই অবাক করে মাদ্রাসায় যোগ দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্রয়ে আদরে সুরাইয়া, সুরজাহান, সাদিয়াদের উড়ান। ন্যাশনাল মাউন্টেন বাইক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছে। ত্রিশ বছর আগে তাঁর মাকে বলা হয়েছিল-” কি হবে আনসারের মোড়ের হাই স্কুলে মেয়েকে পড়িয়ে, তোর মেয়ে কি পড়ে চাকরি পাবে? ওর তো বিয়ে হবে না।” সেদিন থেকেই মুর্শিদাবাদের কোনি ফাইট শুরু করেছিলেন। অক্লান্ত সেই যুদ্ধ। মৌলবাদ, শরিয়ত আইন, লিঙ্গ বৈষম্য সবকিছুর বিরুদ্ধে বাস্তবের কোনির লড়াই।
গত ৩০শে নভেম্বর ২০১৭ দিল্লির অভিজাত হ্যাবিটার সেন্টারে একটি মিষ্টি মেয়ে জানতে চাইলেন তিনি মুর্শিদা ম্যাম কি না? দিদিমণি জানালেন হ্যাঁ। তারপর তিনি দাঁড়ালেন অ্যাম্পিথিয়েটারের সামনে ক্যামেরা আর ফ্লাশ লাইটের সামনে। নিজের ছবির সামনে তিনি। ফেয়ারলেশ গার্ল। HAQ: Center for Child Rights, New Delhi সম্মান জানাতে গিয়ে লিখেছে-” The first proposal came when I was seven years old. I vehemently refused my marriage 13 times
during my childhood,Girls in mirzapur did not go to school then. When they talk about me the say she is neither muslim nor hindu, is she christian… is she a communist? i don’t fit into the stereotypical image of a wife. Society will have to get used to seeing me like this.” popular among the girls of beldanga but an eyesore for the leaders of the community. Murshida Khatoon was the first girl in the nearby districts who achieved a master’s degree in science . Now she is a principal in a secondary school . There is not a single girl in her school who is not associated with some government scheme or who is not interested in education. her reach extends to the girl’s homes.
আমাদের রাজ্যে Girls Child abuse, Early marriage , Exploitation, sexual harassment অনেকটাই বেশি। এখানে যারা ছোটবেলা থেকে নিজেকে সংগ্রাম করে বাঁচিয়ে রেখে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছেন সংস্থা তাদের “Warrior” হিসেবে নির্বাচিত করেছে। মুর্শিদা একজন”Warrior”
মুর্শিদা খাতুন লিখেছেন-
“আসলে কাল সাঁঝবেলার ভালো লাগাটা আমাদের মতো সাধারণ ছাপোষা দিদিমণির কাছে সত্যিই স্বপ্নাতীত। মঞ্চে বসে তখন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, পদ্মশ্রী প্রাপ্ত লেখিকা, রাজস্থানের বসুন্ধরা সরকারের নাকে দম করে রাখা ‘ভাবরী দেবী ‘… যে অনন্য সাধারণ মহিলা সাধারণের প্রতিনিধি হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আইন বার করার মত হিম্মত রাখে… তখন আমাকে যথেষ্ট বিশেষণে বিশেষিত করে মঞ্চে আহ্বান করছে তখন নিজেকে হাতড়ে ফিরছি… খুঁজছি নিজেকে.. আমার ছেলেমেয়ের মাকে.. আমার নিজের স্ত্রী সত্ত্বাকে… আমার নারী সত্ত্বাকে…. কারণ আসার আগে পর্যন্ত শুনতে হয়েছে ‘সমাজ সংস্কার করে বেড়াও ছেলেমেয়ে সব উচ্ছন্নে যাক ‘… বা ‘ওখানে গিয়ে কি হবে? ‘… ইত্যাদি ইত্যাদি.. তাই নিজেকে হাতড়ে ফিরছি..অসহায় হয়ে… পরিবারের এখানে কেউ নেই বলা ভুল হবে অনেক সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। নিজের একজন ছোটবেলার পরিচিত বন্ধু ছিলেন… তবুও এমন একটা সন্ধ্যায় মনে হচ্ছিল লড়াই বলুন কষ্ট বলুন সংগ্রামটা মেয়ে হিসেবে সবটাই রয়ে গেছে হয়তো রূপ পাল্টেছে…
একই প্রশ্ন করা হয়েছিল আমাকে… ত্রিশ বছর আগে… আমার মাকে.. ‘কি হবে আনসারের মোড়ের হাই স্কুলে মেয়েকে পড়িয়ে ‘.. ‘তোর মেয়ে কি পড়ে চাকরি পাবে ‘.. ‘ওর তো বিয়ে হবে না ‘ ইত্যাদি ইত্যাদি.. সত্যিই সেদিন আমি দিশাহীন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম.. মনে হয়েছিল জানি না তো কিছু… যখন আমাকে সম্বর্ধনা দিয়ে কিছু বলতে বলা হল আমি নিজেকে খুঁজছিলাম দিশাহারা হয়ে ভাবছিলাম সত্যিই কে আমি?.. ‘ fearless girl’ বলে যখন অনেক হাততালি পড়ছিল…
বিশ্বাস করুন আমার পা কাঁপছিল. আমার কথা হারিয়ে যাচ্ছিল… আমার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছিল .. আমার সামনে ভিড় করে আসছিল অসংখ্য চরিত্র যারা আমার সমসাময়িক মেয়েরা… অকালে ঝরে যাওয়া আমার ছোট বেলার খেলার বন্ধুরা যারা হারিয়ে গেলো… আমার সহপাঠিনী যারা কোথায় যেন চলে…. আমার পরিচিত আত্মীয়ারা যাদের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে দেখেছি তারা সবাই আমার কাছে যেন কৈফিয়ত দাবী করছিল.. আমি তাদের জন্য কি করেছি…!!!বিদ্যাসাগর রামমোহন এর মত প্রাতঃস্মরণীয়দের সাথে অতি ক্ষুদ্র আমার কাজ উচ্চারিত হলে আমি লজ্জিত হয়ে নিজেকে খুঁজছিলাম…
সমাজের প্রতিটা স্তরের তাড়া খেতে খেতে আর নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে আজ এতো দূরে.. আত্মীয় পরিজন হীন এই মহল… কোথা থেকে আমাকে যেন উদ্ধার করে এই অভিজাত মহলে আমি। দীনহীন আমি ভয়ে কুণ্ঠিত…. ভেবেছিলাম বলবো ওদের কথা… আমার অসহায় ছাত্রীগুলো যাদের লড়াইটা আমার জীবনের লড়াই থেকে এমন কিছু কম নয়।আজকের পরিবেশে ও আমাদের মেয়েরা মাঠ পায় না একটু প্রাকটিস করার জন্য। বলে ওরা নাকি হাফ প্যান্ট পরে প্রাকটিস করে তাই দেখে ছেলেরা নাকি খারাপ হয়ে যাবে… আবার কেউ বলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে… অর্থের অভাবে একচুল এগোতে পারি না….. নেতা বলে দেখছি । কোনো আধিকারীক বলে কী করি বলুন তো….!! ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট জড়িত বলে এড়িয়ে যান অনেকে…… আমরা কিছু করতে চাই বলে কথা দিয়েও এড়িয়ে যান অনেকে…….এতো কথার ভিড়েও কথা খুঁজে পেলাম না.. নিজের জীবনে ফেলে আসা দিনগুলোর যন্ত্রণা আমাকে যেন কেমন বাক রুদ্ধ করে দিল কারণ এখনো প্রতিটা তাজা স্মৃতি আমাকে ভয়ানক যন্ত্রণা দেয়.. স্মৃতিচারণা করতে গেলেই আমি যেন সেই ছোট্ট মেয়ে মুর্শিদার হয়ে কেঁদে ফেলি.. .আজ মনে হয় কি করে পারলো মেয়েটি একা একা … এতো অসম্ভব ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার জীবন অতিবাহিত করে এসেছে মেয়েটি আজ দিদিমণি মুর্শিদা খাতুন নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠি সাব্বাস…. সাব্বাস মেয়ে…. এগিয়ে চলো… thousands mile have to go…. dear…..
আর বলি আরো আরো কষ্ট দাও প্রভু.. আমি আর একটু শক্ত হয়ে উঠি…. শক্ত না হলে তো সিস্টেমের সাথে লড়তে পারবো না…. !! আর কোন কথা থাকে না। শুধু ফাইট কোনি ফাইট।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584