শান্তনু পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ
চার বছর অতিক্রান্ত কিন্তু আজও ঘোড়াই পরিবারে মিলল না সরকারি চাকরি। এমনকি পরিবারের দাবি, দু’লক্ষ টাকা ছাড়া আজও কিছুই পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। জম্বু – কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গিদের হাতে নিহত বিশ্বজিত ঘোড়াই পরিবারের সদস্যরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রামে টিনের বেড়া, অ্যাসবেস্টারে ছাউনি দেওয়া ঘরে কোন রকম বাস বিশ্বজিতের বাবা রবীন্দ্রনাথ ঘোড়াই, মা রেখা ঘোড়াই, দাদা এবং তার ছোট্ট বোনের। চাকরি পাওয়ার পর স্বপ্ন ছিল ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দেবে। অতি কষ্টে ঘোড়াই পরিবারকে সুখের মুখ দেখাবে। কিন্তু জঙ্গিদের হাতে শহীদ হওয়ার ঘটনা আজও মনে করিয়ে দেয় গোটা দক্ষিণ সুন্দরবন বাসীদের।
আরও পড়ুনঃ চির ঘুমের দেশে শায়িত শহিদ রাজেশ ওরাং
সালটা ২০১৬, ৮ই সেপ্টেম্বর প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে বিশ্বজিতের নিথর দেহ। তখন অনেককে দেখা গিয়েছিল তার মৃতদেহের পাশে। অনেক নেতা, নেত্রী সবাই প্রত্যাশা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সময়মত আজও এই পরিবারে মেলেনি কিছুই ।
দাবি পরিবারের। অভাবের সংসারে শুধু ছেলের সামান্য পেনশন ছাড়া আর রুটি-রুজির জায়গা তাদের নেই। কোনক্রমে দিনমজুরের ইনকাম হয়। সেটা দিয়ে কোনরকমে চলে এই পরিবার। বারবার দ্বারস্থ হয়েছে গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের।
পাশাপাশি সাগর বিধানসভার বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার কাছেও। কিন্তু প্রত্যাখ্যান ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে দাবি তাদের। সদ্য ঘটে যাওয়া চিনা সৈনিকদের হাতে মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সৈনিকদের। এই ঘটনা যে কতটা নিন্দনীয় সেটা কিন্তু তাদের চোখে-মুখে অনেকটাই প্রকাশ পেয়েছে। তাদের একটাই আর্জি যে প্রত্যাশা দিয়েছিল সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছে রাজ্য সরকার? আদৌ কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে! চাওয়া-পাওয়া যে আজ তাদের মধ্যে কিছুই নেই।
আরও পড়ুনঃ অপেক্ষার অবসান, বেলগড়িয়ার বাড়িতে ফিরল কফিন বন্দী শহীদ রাজেশের দেহ
শুধু একটাই চাওয়া ছেলের মূর্তি যেন তাদের গৃহের মধ্যে নির্মাণ করে। সেটাও কিন্তু প্রত্যাশার মধ্যে পড়েছে। আর সবটাই অভিযোগ এনেছে সাগর বিধানসভার বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার বিরুদ্ধে। চিনা সৈনিকদের হাতে ভারতীয় সৈনিকদের মৃত্যুর খবরে তাদের দুচোখ ভরে জল।
বেদনা নিয়ে আজও বসে রয়েছে এই ঘোড়াই পরিবার। ভগবান ছাড়া আর তাদের পাশে কেউ নেই। বারবার প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হয়েছে। একটা চাকরির জন্য। কিন্তু প্রত্যাশা ছাড়া কিছুই মেলেনি। তাদের একটাই আর্জি যে, চাকরি হোক বা না হোক আর কোনভাবে এই পরিবারের মতন বঞ্চিত না হয় অন্য শহীদ পরিবার।
যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে তারা বিজেপি করে বলে তাদেরকে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু এটাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সাগর ব্লকের তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি স্বপন কুমার প্রধান। একাধিক সহযোগিতা পেয়েছে বলে দাবি তার।
ঘোড়াই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হরিপদ মন্ডল। চাকরি পাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি রেখেছেন তিনি। সরকারি সহযোগিতা কতটা পূরণ হবে তা কিন্তু সময়ের অপেক্ষায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584