নিজামুদ্দিন সেখ
জেলা হিসাবে মুর্শিদাবাদ ঐতিহাসিক নামেই খ্যাত।বাংলা বিহার উড়িষ্যার এক কালের রাজধানী আজও ফিসফিসিয়ে কথা কয় তার গৌরবোজ্জ্বল অতীতের। এ জেলার নামের সাথে যেমন বিশ্বাসঘাতকতার নাম জড়িয়ে আছে তেমনি জড়িয়ে আছে বীরত্ব, আত্মত্যাগের কাহিনী। ইতিহাসের সেই সব বহু নিদর্শন আছে আদরে আবার কেউ অনাদরে।তেমনই এক বীরত্বের কাহিনী অনাদরের সমাধিস্থ হয়ে আছে মুর্শিদাবাদ এর রেজিনগরের ফরিদপুরে।পলাশী যুদ্ধের বীর শহীদ মীরমদন এর শেষ ঠিকানা।
এই স্থানে আসতে গেলে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক রেজিনগর মোড় থেকে ২ কিমি পশ্চিমে গিয়ে রামপাড়া হাই স্কুল মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে ঘুরে নারকেলবেড়িয়া ঘাটের পথে ফরিদ এর আস্তানা বা ফরিদবাবার মাজার। তারই এককোনে নিভৃতে চিরনিদ্রায় চির যামিনির আঁধারে শায়িত বীর শহিদ,কার্যত উপেক্ষিত।
১৭৫৭ সালে ২৩ শে জুন পালাশীর সেই রক্তমাখা লাখবাগ আম্রকাননে স্বাধীনতায় সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।পলাশ ফুল লালে লাল হয়ে গিয়েছিল বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের বেইমানিতে।সেদিন যুদ্ধ ক্ষেত্রে বীরের মত লড়াই করে গেছেন ইংরেজ এর বিরুদ্ধে এই বীর মীরমদন।যুদ্ধ ক্ষেত্রে গোলার আঘাতে প্রাণ যায় মীরমদনের।
অনেকে বলেন- বিশ্বস্ত কিছু নবাবী সেনা ও মীরমদনের অনুচর গোপনে তাকে ফরিদবাবার করবের পাশে সমাধি দেন। রেজিনগরের প্রাচীন লোকদিগের অনেকে বলে থাকেন মীরমদনের প্রিয় অশ্ব তাঁর মুণ্ডুহীন দেহ নাকি পিঠে করে এখানে আনে,তারপর এখানে সমাধি দেওয়া হয়।ফরিদের আস্তানা ঘিরে গড়ে উঠেছে লোকশ্রুতি। কবরের উপর যে নির্মাণ কাজ ও এখানে অবস্থিত একটি পুকুর তা একরাতে সৃষ্টি বলে অনেকে মনে করেন।এখানে একটা ভক্তির আবহ গড়ে তোলা হয়েছে,তবে সবটাই ফকির সাহেব ফরিদবাবা কে ঘিরে। তাঁর মাজার সংস্কার হয়।
কি হিন্দু কি মুসলিম অনেকেই নাকি এখানে মানত নিয়ে আশাপদ ফল পেয়েছেন।মহরম মাসের ৭ তারিখ এখানে মেলাও বসে।
আর এরই পাশে চরম উপেক্ষিত হয়ে থাকেন দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা মীরমদন।সে ভাবে সংস্কার করা হয় না তাঁর সমাধিক্ষেত্র। অনেকে আসেন তাঁর করবের সামনে মাটির ঘোড়া সিন্নি দিয়ে তাকে সম্মান জানান তারপর আবার সেই আঁধারের বিছানায় শুয়ে থাকেন স্বদেশ ভাবনায় ভাবিত মীরমদন।ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ একটি ফলক লাগিয়ে তকমা দিয়েছে মীরমদনের কবর ইহা “সাধারণ কবর মাত্র”।প্রশ্ন এখানেই,ব্যাথা এখানেই – যে বীর রক্তমাখা শরীরে স্বদেশ ভাবনায় তোপের মুখে নিজের মস্তক দিয়ে প্রতিরোধ করতে চেয়েছে আগ্রসী শক্তি কে,বেইমানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে মৃত্যুভয় হেলায় করেছে তুচ্ছ, সেই বীরের সমাধি নিছক সাধারন করব? তা ইতিহাসের অনুরাগীরা ভুলে গেলেন নাকি পলাশীর যুদ্ধ ক্ষেত্রের চিত্র।ফলে মীরমদন যে উপেক্ষার ভাষা তা বলার হয়ত আর অপেক্ষা রাখেনা।
মরণেও মরনি তুমি হয়েছ অমর,
চির নিদে শান্তির ঘুমে গেছ চলে,
তবু আজও তোমার হৃদয় কাঁদে মোদের তরে,
চির বীর যুবা তোমার স্মৃতির তরে দিয়ে গেলাম শুধুই কলমের কালি?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584