বিশেষ প্রতিবেদন,বিদ্যুৎ মৈত্র:-
“ সারা সারা রাত..আজ কেটে যায়…চোখের জলে আজ তোমায়,মনে পড়ে যায়….” কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে রাকেশদের। ভিজে যাচ্ছে চোখের কোণ। একসময় ‘ক্যানভাস’ ব্যান্ডের সঙ্গে মনে মনে জড়িয়ে পড়েছিলেন সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলার দৌলতাবাদ থানার অর্ন্তগত বালির ঘাট সেতুতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষিকা সুফিয়া মমতাজ।ঘটনার দিন দুপুরেও রাকেশরা বুঝতে পারেনি অভিশপ্ত ঐ বাসটিই চীরদিনের মত কেড়ে নিয়ে যাবে তাদের একসময়ের সহপাঠীকে। যেমন বুঝতে পারেনি সম্বুদ্ধ রুদ্র,কিশোর মজুমদার, স্বাগত সরকার,সৈকত দাশগুপ্ত, অঙ্কুর স্যাননাল,পাপাই দাস, আলেয়া বেগম, কিংবা জুহিতা সুলতানার কেউই।এখনো ভাবতে পারছে না তাদের ব্যান্ডের জন্য গাওয়া গানের লাইন গুলো সত্যি হয়ে ক্যানভাসেই ঠাঁই হবে প্রিয় সুফিয়ার।বিয়ের পর থেকেই তাদের কাছে যে বন্ধু প্রায় নিখোঁজ ছিল তাকে কিনা শেষকালে খুঁজে পাওয়া গেল লাশকাটা ঘরে। মানতে নারাজ ওরা। যেমন মানতে পারছেন না বহরমপুর মণিন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জসিমুদ্দিন আহমেদও। সে যে তাঁর মেয়েরই মতো। এইতো সেদিন রক্ষণশীল সমাজের সাথে একপ্রকার লড়াই করে তাঁর স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বহরমপুর গার্লস কলেজে সেরিকালচার নিয়ে বিএসসি তে ভর্তি হয়েছিল সুফিয়া। তারপর ডোমকলের বসন্তপুর বি এড কলেজ থেকে বি এড শেষ করে সামসেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপূর এ বি এস স্কুলের ওয়ার্ক এডুকেশনের শিক্ষিকা পদে যোগ দিয়েছিল ২০১৩ সালে।সে আজ মৃত এটা মানতে না পেরে ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন প্রিয় ছাত্রীর বাড়ি।গভীর সমবেদনায় পাশে দাঁড়িয়েছেন শোকস্তব্ধ পরিবারের। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ কে এন কলেজের অধ্যাপক সন্দীপ মজুমদার।কার্যত বাকরুদ্ধ। শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর এই প্রিয় ছাত্রীর সাথে যে যোগাযোগ ছিল তাঁর। এখন সবই স্মৃতি।
নিয়তির নির্মম পরিহাস ঘটনার চারদিন পরেও মানতে পারছেন না সুফিয়ার সহকর্মী ভীষ্মদেব মণ্ডলরা।২৫ তারিখ শেষ বিকেলের বাসে যখন পাশাপাশি বসে বাড়ি ফিরছিলেন তখনো ইতিহাসের শিক্ষক ভীষ্মদেব বাবু জানতেন না স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখাশোনায় তারই সহকারি সুফিয়া ম্যাডামের সাথে তাঁর আর দেখা হবে না কোনদিনও।যখন ঘটনার কথা শুনলেন তখন তারা যে যার মত স্কুল যাচ্ছিলেন।রাস্তাতেই পথ দুর্ঘটনার খবর পেতে পেতেই শুনতে পান ঐ অভিশপ্ত বাসেই ছিলেন তাদের স্কুলের সুফিয়া ম্যাডাম।ততক্ষ্ণনে সব শেষ।শেষবারের মত শান্ত মৃদুভাষী দিদিমণিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে।মঙ্গলবার সৎকাজ সমাধা করে তারা যখন আবার ফিরে গিয়েছেন স্কুলের কাজে বাস্তবিকই তখন তারা বিধ্বস্ত শরীরে আর মনে। যখন ভীষ্মদেব বাবুর সাথে কথা হচ্ছিল সেদিন ও বৃহস্পতিবার।বলছিলেন এইতো ২৫ তারিখ গত বৃহস্পতিবার গেল। এরই মধ্যে কত কিছু ঘটে গেল বিশ্বাসই হচ্ছে না যে। সুফিয়া ম্যাডামের দুই নাবালক সন্তানের কথা মনে পড়লে তাঁর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে দলা পাকানো কান্না। শুধু তো সহকর্মী নন তিনি যে ম্যাডামের এস এস সির ব্যাচমেটও। আজ সব ইতিহাস।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584