শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
বউবাজার বিপর্যয় এবং তারপর করোনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করেছে মেট্রো রেল। সূত্রের খবর, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য ভারতের গভীরতম ভেন্ট শ্যাফট তৈরি হল কলকাতায়। ব্রেবোর্ন রোডের পাশে মল্লিক ঘাট একেবারে হুগলী নদীর তীরেই তৈরি করা হয়েছে দেশের গভীরতম ভেন্টিলেশন শ্যাফট। প্রায় ১৫ তলা বাড়ির দৈর্ঘ্য সমান এই বিশালাকার শ্যাফট বানিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা অ্যাফকনস।
লকডাউনের মধ্যেই দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে কেএমআরসিএল। তাদের নির্দেশেই নির্মাণকারী সংস্থা অ্যাফকনস বানিয়েছে এই শ্যাফট। এটা দেখতে একটা বিশালাকৃতির কুয়োর মতো, যা মোটা কংক্রিটের বেড় দিয়ে বাঁধানো আছে। যেখান দিয়ে অতি সহজেই পাঠানো যাবে অক্সিজেন।
যেখান দিয়ে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে আসা যাবে যাত্রীদের। এই ভেন্টিলেশন শ্যাফট যেখানে বানানো হয়েছে, তার একদিকে হুগলী নদী পেরোলেই হাওড়া স্টেশন। আর একদিকে মহাকরণ মেট্রো স্টেশন। ভেন্টিলেশন শ্যাফট থেকে হাওড়া মেট্রো স্টেশনের দুরত্ব হচ্ছে ৭৫০ মিটার। মহাকরণ মেট্রো স্টেশন থেকে ভেন্টিলেশন শ্যাফটের দুরত্ব ১৪০০ মিটার।
আরও পড়ুনঃ করোনা রোগীর চিকিৎসক, পরিবারকে ফের হেনস্থার অভিযোগ প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে
কিন্তু শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এই ভেন্টিলেশন শ্যাফট বানানোর উদ্দেশ্য কি? প্রসঙ্গত মাটির তলা দিয়ে কোনও যান চলাচল হলে এই ধরনের ভেন্টিলেশন শ্যাফট রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ পাতালে কোন দুর্ঘটনা হলে বা কোন সমস্যা তৈরি হলে তখন যাত্রীদের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বার করে আনতে প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে দুটি মেট্রো স্টেশনের মধ্যবর্তী দুরত্ব হওয়া উচিত ১ থেকে ১.৫ কিলোমিটার। কিন্তু হাওড়া স্টেশন থেকে মহাকরণের মধ্যে দুরত্ব ২ কিমি। ফলে মাঝের অংশে ভেন্টিলেশন শ্যাফট ভীষণ জরুরি।
আরও পড়ুনঃ আমন্ত্রিত হয়েও সরকারি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত শুভেন্দু, বিতর্ক চান না জানালেন পার্থ
এই অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার সত্য নারায়ণ জানিয়েছেন, “সুড়ঙ্গের মধ্যে অক্সিজেন বা হাওয়া পাঠানো ভীষণ জরুরি। তা এই ভেন্টিলেশন শ্যাফট দিয়ে পাঠানো হবে। এছাড়া শ্যাফটের সাথে জুড়ে দেওয়া হবে দু’দিকের লাইন। ফলে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের উদ্ধার করা যাবে।’
তবে এই শ্যাফট বানানো যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তা মানছেন মেট্রো রেলের ইঞ্জিনিয়ারই। প্রাথমিক ভাবে বউবাজার বিপর্যয়ের পর হাইকোর্টের নির্দেশে বেশ কিছুদিন আটকে যায় মেট্রোর কাজ। তার ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে প্রজেক্ট থমকে যায়। তার পরে একাধিক কর্মীর করোনা ধরা পড়তেও কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তারপরে ছিল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। যে জায়গায় এই শ্যাফট বানানো হয়েছে, সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। বিশেষ করে পাশে রয়েছে হুগলী নদী।
এছাড়া রয়েছে চক্ররেলের লাইন। একবার কাজ করতে গিয়ে জলস্তর উঠে যাওয়ায় কাজ বন্ধ করতে হয়। তারপর প্রতি মুহূর্তে হার না মেনে অঙ্ক কষে এগোতে হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই কাজ সফল হওয়ায় হাসি ফুটেছে ইঞ্জিনিয়ারদের মুখে। এখন দু’দিকের সুড়ঙ্গের সাথে শ্যাফট জোড়ার কাজ চলছে। তারপরেই এই অংশের কাজ সম্পূর্ণ হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584