মৌনতার প্রগলভ ভাষা
গৌতম রায়
কোনো কোনো মৌনতা বুঝি বা কখধো সখনো অতি প্রগলভার সমার্থক হয়ে যায়।যেমন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতি প্রগলভতার মাঝে সময় বুঝে মৌনীবাবার ভূমিকা। সেই ছদ্মবেশের ভিতরেই লুকিয়ে থাকে মোদির মাষ্টার স্টোক।মোদি তাঁর পূর্বসূরী ডঃ মনমোহন সিংয়ের মতো মৌনীবাবা নন।দুষ্টু লোকেরা বলে মনমোহন চলতেন রিমোট কন্ট্রোলে।রিমোটের সুইচ টা থাকতো সোনিয়া গান্ধীর হাতে।তিনি যতোখানি বলতে দিতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের নাকি তার থেকে বেশি একটি শব্দ বলবার হিম্মত ছিল না।রটনা সত্যি হোক আর মিথ্যে হোক বাস্তবে আমরা দেখেছি বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সত্যিই আশ্চর্য জনক নীরবতা ই পালন করে গিয়েছিলেন মনমোহন।
মোদি কিন্তু তেমন নন। আমাদের ইস্কুল জীবনের এক মাষ্টারমশাই প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের ” ব্রজ মাস্টারে” র আদলের এক আধুনিক ব্রজ মাস্টার সম্পর্কে বলতেন; উনি প্রয়োজনে বেশি কথা বলেন।ছোটবেলাকার মাস্টারমশাইয়ের কথাটা মোদি সম্পর্কে একটু বেশি রকম ই প্রযোজ্য। আর যে কথাটা আমাদের ছোটবেলাকার মাস্টারমশাই সুচারুশরণ বাগচি বলতে পারেন নি, তা হলো; ব্রজ মাস্টাররা প্রয়োজনে নীরব থেকে অনেক বেশি রকম কথা বলেন যা তাঁর মনোবাঞ্ছা পূরণের ক্ষেত্রে প্রগলভতার থেকেও অনেক বেশি রকমের সহায়ক হয়।
বন্য শ্বাপদ অব্যর্থ শিকার ধরার সময়ে নীরব হয়ে যায়।পাঠকের যদি বুদ্ধদেব গুহ ” কোজাগর” পড়া থাকে তাহলে সেই জান্তব হাড় হীম করা নীরবতার ওম হয়তো পেতে পারেন।রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়ে যখন তামাম ভারতবর্ষ প্রগলভ , তখন কিন্তু মোদি- অমিত শাহ জুটি নীরব।কেউ বলছেন; প্রণববাবু ই আবার , কেউ বলছেন; মোহন ভাগবত, তো কেউ বলেন; দ্রৌপদী মুর্মু– শাসক শিবিরের নেতারা বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। আলোচনা করছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে, অথচ শাসক শিবির কোনো নাম প্রকাশ্যে আনছেন না।পরিস্থিতিটা সেই আমাদের ” কোজাগর” উপন্যাসের পটভূমিতেই বার বার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পবিত্র ঈদের আগে লোকাল ট্রেনের কামরার ভিতরে জুনেইদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর মোদির প্রাথমিক নীরবতা ঝাড়খন্ডের আলিমুদ্দিন ওরফে আসগর আলির জীবন কেড়ে নিয়েছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মধ্যে সোচ্চার হচ্ছেন এই দানবতা সম্পর্কে। তবে মমতার রাজ্যেও গোরু চুরির অভিযোগে গত ২৩ শে জুন উত্তর দিনাজপুরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে নাসিমুল হক, মহম্মদ সমীরুদ্দিন, মহম্মদ নাসির কে( আনন্দবাজার পত্রিকা,২ রা জুলাই, ‘১৭, পৃ-৪) ।মমতা কিন্তু এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে নীরব।মোদির নীরবতাতে উৎসাহ পেয়ে রাজনৈতিক হিন্দুরা ঝাড়খন্ডের রামগড়ে অসগর আলিকে মেরেছে ২৯ শে জুন। তার আগে দাদরির শেখ আখলাখের পর একের পর এক হত্যা করেছে ঝাড়খন্ডের সারাইকেলা খারসাওয়ানের শেখ হালিম, শেখ সিরাজ, নইম, শেখ সাজ্জুকে, লাতেহারের মহম্মদ মজলুম, ইমতিয়াজ খানকে।জুনেইদের আগে অসভ্য বর্বর খুনি হিন্দুত্ববাদীরা গোমাংস ভক্ষক বলে হত্যা করে হরিয়ানার মেওয়াটের স্বামী – স্ত্রী, ইব্রাহিম ও রশিদাকে।কুরুক্ষেত্রের মস্তান আব্বাস কে। রাজস্থানের প্রতাপগড়ের জাফর হোসেনকে।অলওয়রের পেহলু খানকে।তাই মমতা যদি উত্তর দিনাজপুরের মহম্মদ নাসির, নাসিমুল হক, মহম্মদ সমীরুদ্দিন কে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে কেবলমাত্র ” মুসলমান” হওয়ার কারণে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অভিযুক্ত দের সম্পর্কে এখন ই কঠোর না হন তাহলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে কতোক্ষণ?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584