স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আন্দোলনে মুর্শিদাবাদ
-সংহিতা দেব(লেখিকা বিশিষ্ট নিবন্ধকার ও কবি)
“হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে,সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে,তবু কোলে দাও নাই স্থান। অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।”
……কবির এই প্রকাশ মুর্শিদাবাদবাসী বেশ ভালো ভাবেই অনুভব করে চলেছে বেশ কিছুকাল যাবৎ। বহু বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষ সতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাইছে। বলিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের দীর্ঘকালীন শাসন হোক বা জেলার বিখ্যাত মানুষজন মন্ত্রীসভার সভাসদ হোন, বা মানুষ যতই পরিবর্তন প্রত্যাশী হোক ,ভোট দিয়ে যতই মনোনীত পাত্র নির্বাচিত করুক না কেন মানুষের সকল আশাই ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে।
একদা বাংলা,বিহার,উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ মুর্শিদ কুলি খাঁর স্বপ্নের শহর ছিল। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও প্রাচীন এই জেলার কৃষ্ণনাথ কলেজ (১৮৫৩)। তবুও এই মুর্শিদাবাদের শিক্ষাব্যবস্থার হাল আজ বেহাল। ২০১১ এর সেন্সাস অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ৭১,০২,৪৩০। এর মধ্যে শিক্ষিতের হার ৬৭%। এই জেলায় ৬৫% মুসলিম বাসিন্দা। আদি মুর্শিদাবাদ শিক্ষা সংস্কৃতির পীঠস্থান হলেও জনসাধারণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের হালও অনেকখানি বেহাল।শিক্ষাব্যবস্থার বেশ কিছুটা চলে যায় বেসরকারী খাতে। জেলায় ২৬ টি ডিগ্রী কলেজ, আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান আজ অব্দি নেই।এর পাশাপাশি বর্ধমান, মালদা, নদীয়া, বারাসাত, বাঁকুড়া, বীরভূমে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।উত্তর দিনাজপুরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখতে গেলে জেলাসদর বহরমপুর থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব ১২৭ কি.মি, বিশ্বভারতী ১০৭ কি.মি,উত্তরবঙ্গ ২৮৫ কি.মি।এই বিশাল দূরত্বকে মাথায় রেখে জেলার কৃতি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা এগিয়ে চলেছে বছরের পর বছর। অথচ অন্নের সংস্থান করতেই বহুমানুষ মুম্বাই,কেরালা,দিল্লী, দুবাই এর মতো দূর দূরান্তে পাড়ি দিচ্ছে। তাদের সন্তানদের পক্ষে নিতান্তই কষ্ট সাপেক্ষ উচ্চশিক্ষার্থে অন্য জেলায় ছুটে যাওয়া। অথচ আর্থিক দিক মজবুত করতে উচ্চশিক্ষারই একান্ত প্রয়োজন।আবার এই জেলার তিন দিকে রয়েছে বাংলাদেশের সীমানা। আর্থিক অনটনে বহুমানুষ চোরাপথে বিভিন্ন কারবারে লিপ্ত হচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে বহু পরিবার।এই সমস্ত দিক উন্নত করার জন্য শিক্ষার প্রসার একান্তভাবেই দরকার। সরকার যদি এই বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ না নেন, বহু প্রতিভার বিনাশ হয়ে যাবে গর্ভেই। অন্ধকারেই পরে থাকবে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ। সেহেতুই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো একান্ত ভাবেই দরকার।
মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী নানা মহল থেকেই উঠে এসেছে বারংবার। জেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ববর্গ সাহেব আলি, জান্নাতুন ফিরদৌস, মাহতাজ নাসরিন, কবি মোস্তাফিজুর রহমান আরো অনেকেই এই দাবীতে তীব্র ভাবে সোচ্চার হয়েছেন।অনেকেই চান এই দাবীতে আন্দোলনের সাথে লং মার্চ হোক।অনসনের হুমকিও উঠে এসেছে কোন কোন স্তর থেকে। বুদ্ধিজীবি মহল ছাড়াও ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের উচিত জোট বেঁধে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584