ভাতাড়ে সকাল সকাল ভোটের বলি

0
109

আশাদুল সেখ, ভাতাড়, পূর্ব বর্ধমান:-

শনিবার সাতসকালে রেশন দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হলো এক তৃণমূল কর্মীর। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় ঐ মৃত ব্যক্তির মাথা উড়ে গিয়েছে।
ভাতার থানার পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম রমজান মোল্লা, বয়স ৫৫। বাড়ি ভাতার থানার অন্তর্গত ভূমশোর গ্রামে।

বলি রমজান মোল্লা

পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় তার পরে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন সান্তনা বেগম। এলাকার তৃণমূলের একটা অংশ সান্তনা বেগমকে মেনে না নেওয়ায় তৃণমূলের একটা গোষ্ঠী নির্দল প্রার্থী হিসাবে শামীমা খাতুনকে দাড় করিয়ে দিয়েছিল। এই শামীমা খাতুন এর পক্ষে রমজান মোল্লা নেতৃত্বে ছিলেন।
তৃণমূলের একটা অংশের অভিযোগ যে নির্দল প্রার্থী শামীমা খাতুনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য বারবার চাপ দেয়া হচ্ছিল। শুক্রবার রাত পর্যন্ত নির্দল প্রার্থী হিসাবে শামীমা খাতুনকে বারবার প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ নিবেদন করা সত্ত্বেও শোনেননি শামীমা খাতুন ও তার লোকজনেরা। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে যে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী শামীমা খাতুন এর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়নি বলেই রমজান মোল্লাকে খুন হতে হল।
এখানে উল্লেখ থাকে যে ভাতারে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূল নেতা বনমালী হাজরার সাথে বিবাদ গোবিন্দ অধিকারীর গোষ্ঠীর লোকজনের। একদিকে মান গোবিন্দ গোষ্ঠীর অন্যদিকে বনমালী হাজরা। জানা গিয়েছে যে রমজান মোল্লা মান গোবিন্দ অধিকারী গোষ্ঠীর লোক। রমজান মোল্লার পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরার লোকজনেরা পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে রমজান মোল্লাকে। বনমালী হাজরার প্রার্থী সান্তনা বেগম।
এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে গত মার্চ মাসে গুসকরায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা করার পরে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার আহ্বান জানালেও মতবিরোধ মেটেনি কখনো।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় আরও বড় আকার ধারন করল দলের কোন্দল।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিধায়ক সুভাষ মন্ডল তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলছেন পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
মৃতের পরিবার থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে থানায়।
পুলিশ জানিয়েছে যে অভিযুক্তরা পলাতক। দুষ্কৃতীদের ধরতে সমস্ত রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে পুলিশ এলাকায় পুলিশ টহলসহ পুলিশ পিকেট বসেছে।
নির্বাচনের মুখে ভাতারে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বহু তৃণমূল কর্মী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে তৃণমূলের সরকার থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলীদের হাতে তৃণমূলের কর্মী নেতারা খুন হচ্ছেন।
কেতুগ্রামে তৃণমূল নেতা কেতুগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহেদ শেখ খুন হয়েছে। জাহের শেকের খুনের অভিযোগ ছিল তৃণমূল আরেক নেতার বিরুদ্ধে।
কিছুদিন আগে কালনা এক নম্বর ব্লকের সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শুকুর আলী খুন হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের হাতে অভিযোগ এমনটাই। পঞ্চায়েত প্রধান শুকুর আলী সহ তার সঙ্গী বাপন শেখ খুনের ঘটনায় পুলিশ তৃণমূলের লোকজনদের গ্রেপ্তার করলেও এখনো পর্যন্ত এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে।
একের পর এক খুনের ঘটনা ঘিরে তৃণমূলের রাজ্য নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও জেলায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ রয়েছে। মুখ খুললেই তৃণমূলের পদ চলে যাবে- এরকম ভাবনা থেকেই চুপ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এবার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই বেশি।
শাসক দলকে ভাবিয়ে তুলেছে একদিকে গোজ প্রার্থী অন্যদিকে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত।
তাই তৃণমূলের মন্ত্র একটাই যেনতেন প্রকারে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র আটকানো।
বিরোধীরা প্রার্থী হলেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয় লাভ করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে ।তাই আগেভাগেই মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা সৃষ্টি করা এবং প্রার্থী যাতে না দিতে পারে তার জন্যই এই ধরনের সন্ত্রাস বলে মনে করছেন বহু রাজনৈতিক নেতা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here