সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভা অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বেসরকারি বিদ্যালয়ের রমরমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে,সাম্প্রতিক কালে বেসরকারি স্কুলগুলির রমরমা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনিকভাবে একান্ত জরুরি।শিক্ষালয় আগামীর নাগরিক তৈরি করে;যেখানে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ,বড় হয়ে ওঠার ভিত্তি গড়ে ওঠে।যা কখনই যথেচ্ছাচারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না।তার জন্য প্রয়োজন সরকারি নীতি এবং নিয়ন্ত্রণ।
বেসরকারি স্কুলের নিয়ন্ত্রণের দাবী মেনে নিলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় বেসরকারি বিদ্যালয়ের এত রমারমার কারণ কি?নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি জনকল্যানের নিমিত্ত চলছে না,সম্পূর্ণ ভাবেই ব্যবসায়িক লাভ-লোকসানের হিসাবেই চালিত হচ্ছে।আর হাজার হাজার অর্থ ব্যয় করে অভিভাবক তার সন্তানকে এই বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি করছে।কিন্তু কেন? সরকার পরিচালিত বিদ্যালয় গুলিতে যারা শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন,তাঁরা তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতামানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োজিত হন।যেখানে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই ধরনের কোন স্বচ্ছতা নেই।তারপরেও সরকারি বিদ্যালয়গুলির প্রতি কেন অভিভাবকরা আকর্ষিত হচ্ছেন না?
শিক্ষামন্ত্রী এই প্রশ্নোত্তর পর্বেই পরিসংখ্যান দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে,স্কুল ছুটের সংখ্যা কমছে,যার কারন হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন কন্যাশ্রী, সবুজসাথী সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের।প্রথমত স্কুল ছুটের সংখ্যা কমার পরিসংখ্যান কিন্তু প্রকৃত অর্থে শিক্ষা লাভের সাথে সম্পর্কিত নয়,তার সাথে যুক্ত থাকে আরও অনেক বিষয়।আর দ্বিতীয়ত, শিক্ষা সহায়কের সাথে শিক্ষালাভকে মন্ত্রী মশাই গুলিয়ে ফেলেছেন।কন্যাশ্রী সবুজসাথী শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এবং জরুরি সহায়ক সরকারি প্রকল্প একথা ঠিক কিন্তু শিক্ষালাভের জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত যোগ্য শিক্ষক,বিজ্ঞান ভিত্তিক সিলেবাস,ছাত্র শিক্ষক অনুপাত,শিক্ষা পরিকাঠামো।এরাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে যার অভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।
উপরোক্ত আলোচনার মানে এই নয় যে,বেসরকারি বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষাদানের উপযুক্ত সমস্ত কিছুই হাজির যার কারনে অভিভাবকরা আকর্ষিত হচ্ছেন,বিষয়টি এমন নয়।প্রতিটি অভিভাবক স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান যেন মানুষ হয়,তাই সে ছুটছে।বেসরকারি বিদ্যালয়ে গিয়েও প্রতারিত হওয়ার উদাহরণ স্বল্প নয়।অর্থনৈতিক মানসিক অনেক ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা।
ফলে সরকারের উচিৎ সরকারিভাবে শিক্ষা সহায়ক প্রকল্পের সাথে সাথে প্রকৃত শিক্ষা দানের উপযুক্ত সরকারি শিক্ষানীতি তৈরি করা,যাতে সরকার পরিচালিত বিদ্যালয়গুলির প্রতি সাধারণ মানুষের ভরসা জাগে,নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।কারন বেসরকারি বিদ্যালয় ব্যবসায়িক ভাল মন্দের বিচারে পরিচালিত হলেও জনগনের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করার উপায় নেই তার আগামীদিনের নাগরিক তৈরির প্রতি।ফলে সেই দায়বদ্ধতার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে শিক্ষামন্ত্রী যদি সরকারি শিক্ষাদান নীতি নির্ধারণ করেন তাহলেই বেসকারি বিদ্যালয়গুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হবে।তারপরে নিয়ন্ত্রণ করার দরজাও তো উন্মুক্ত থাকলই।সেই পুরানো প্রবাদ,’আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখায়’
©Newsfront
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584