সমাজকে নতুন আলোর পথ দেখাতে শামিল পদ্মিনী দত্তশর্মা

0
85

নবনীতা দত্তগুপ্ত, কলকাতাঃ

আমাদের জীবনযুদ্ধে সম্পর্কের বাঁধনগুলো ক্রমশ ঢিলে হয়ে পড়েছে। এই ইঁদুর দৌড়ের গতিপথে কাছের মানুষকে ভালোবেসে আগলে রাখার বাসনা হয়ে পড়ছে ক্ষীণ। শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা নন, এই ফাটলের প্রতিচ্ছবি বাবা-মা-সন্তানদের সম্পর্কেও ধরা পড়েছে।

কখনও অজান্তে আবার কখনও শুধুমাত্র নিজেকে ভাল রাখার তাগিদে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়ার ইচ্ছেশক্তি আজ হারাতে বসেছি আমরা। আর সেই সম্পর্কের অতীত তল্লাশি করে মানুষের মনের সমস্যার সঠিক সন্ধানের বাসনায় অনায়াসে দিনরাত এক করে দিয়েছেন এক প্রবাসীনি।

পদ্মিনী দত্তশর্মা। ছবিঃ প্রতিবেদক

সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ইনি। পরবর্তীতে জনসংযোগ আধিকারিকের পেশায় নিয়োজিত হন। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করতেন। তাই নিজের মনের ভাবনা প্রকাশ করতেন ব্লগ এবং আর্টিকেলের মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি একজন মনোবিদ হিসেবেও মানুষের মনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে কলম ধরেন। তাঁর লেখনিতে প্রকাশিত হয়েছে ১০ টি বই।

বরাবরই এক্সপেরিমেন্টে বিশ্বাসী পদ্মিনী দত্তশর্মা নিজেকে একজন লেখিকার আবরণে সীমাবদ্ধ রাখেননি। সমাজের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিতে পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য নজির। তিনি একাধারে সুলেখিকা, অন্যদিকে মনোবিদ এবং অবশ্যই চিত্রনির্মাতা।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার দেওয়ালে গড়ে তুলেছেন ‘নো মোর টিয়ার্স… রাইজ অ্যান্ড ফাইট’, ‘ভ্রষ্টা -দ্যা স্টোলেন চাইল্ডহুড’, ‘বুমেরাং’-এর মতো অনবদ্য সব শর্ট ফিল্ম। পদ্মিনী পরিচালিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি দর্শকের মনের দরজায় করেছে কুঠারাঘাত। সমাজের না বলা বাস্তবকে প্রাসঙ্গিকতার সাথে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের ছবিতে।

তাঁর মতে, ‘স্পাইস আপ ইয়োর ম্যারেজ’ বইটির সফলতার পর তাঁর মনে একটি চিন্তা বারবার উঁকি দিত। শুধুমাত্র পুস্তকের আদলে নয়, সিনেমার মাধ্যমে আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে, যাতে প্রতিটি মানুষ নিজের সম্পর্কের গাঢ়তা সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে পারে। প্রশ্ন করতে পারে নিজের অন্দরের সত্তাকে।

এরপরই তিনি তৈরি করেন প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘নো মোর টিয়ার্স… রাইজ অ্যান্ড ফাইট’। একটি মেয়ের অসহায়তাই এই ছবির বিষয়বস্তু। ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে লেখাপড়ায় ভাল হলেও তার লেখাপড়ায় বাধ সাধে তার পরিবার। মেয়েটির হঠাৎই বিয়ে ঠিক হয় বাবার বয়সী এক ভদ্রলোকের সাথে, যিনি আবার সম্পর্কে মেয়েটির কাকু, তার বাবারই বন্ধু।

ছেলের ডাক্তারি পড়ার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে প্রচুর টাকা নেয় মেয়েটির বাবা। নিজের ছেলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে অনায়াসে নিজস্ব কন্যাসন্তানকে রীতিমতো জলাঞ্জলি দেয় মেয়েটির পরিবার। ঠিক এই সমাজের কলুষিত অধ্যায়কে গল্পের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছেন পদ্মিনী। প্রথম ছবির অসামান্য সফলতার পর তিনি দ্বিতীয় ছবি ‘ভ্রষ্টা -দ্যা স্টোলেন চাইল্ডহুড’-এর মাধ্যমে তুলে ধরেন এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মায়ের গল্প। মাত্র ১৮ মিনিটের এই ছবিতে দেখা যায় একজন মা নিজের অলীক কল্পনা আর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চায় নিজের মেয়ের মধ্যে দিয়ে।

মেয়ের ইচ্ছে, চাহিদাকে অনায়াসে দূরে সরিয়ে এক মায়ের শুধুমাত্র নিজস্ব চাহিদাকে প্রতিপন্ন করাকে গল্পের বুননে দর্শকদেরর সামনে হাজির করেন স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিটি। পদ্মিনীর তৃতীয় ছবি ‘বুমেরাং’ সমাজে এক অনন্য বার্তা দিয়েছে।

সম্প্রতি তাঁর রচিত উপন্যাস ‘লেজিটিমেটলী ইললেজিটিমেট’ পাঠকদের মন জয় করেছে। ভবিষ্যতে এই উপন্যাসটি ঘিরে সিনেমা করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি এক সিনেমার স্ক্রিনিং-এ এমনই কথা জানিয়েছেন পদ্মিনী দত্তশর্মা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here