শ্যামল রায়,কাটোয়াঃ
নবদ্বীপের রাসযাত্রা ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকা সহ পূর্বস্থলী এক নম্বর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে এবং সেইসঙ্গে কাটোয়ার দাঁইহাটেও প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। বারোয়ারি কমিটি গুলোর মধ্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য মনে মনে প্রতিযোগিতা যেমন চলছে তেমনি প্রকাশ্যেও বড় বড় মন্ডপ এবং প্রতিমার বৈচিত্র তার সাথে থিমে জমে উঠেছে দাঁইহাট শহর।
কাটোয়ার কার্তিক লড়াই যেমন প্রধান উৎসব শহরবাসীর কাছে তেমনি নবদ্বীপ এবং দাঁইহাট রাস উৎসব বড় উৎসব শহরবাসীর কাছে।
তাই শহরজুড়ে প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি মণ্ডপসজ্জা ও আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে শহর।
ভাগিরথী ঘেষা দাঁইহাট শহরে রাসে শাক্ত ও বৈষ্ণব মতেরই মিলন ঘটে। শিব কালী মূর্তির পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণের মূর্তি ও দেখা যায় রাস উৎসবে।তবে আজকাল রাস উৎসবে নানান ধরনের থিমে সেজে উঠেছে শহর দাঁইহাট।
একাধিক পুজো হয়ে থাকে শহরজুড়ে, অনুমোদিত পুজো সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক কিন্তু অনুমোদন ছাড়া পুজো হয় প্রায় আড়াই শত।
উৎসবকে শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকেও নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে শহর।শহরের সুবাস রোডের বৌদ্ব সংঘের মন্ডপ সেজে উঠেছে রাজস্থানী পুতুলে, কাগজ ফোম দিয়ে তৈরি ঘোড়া হাতি পালকিতে। এই পুজো কমিটির সম্পাদক নির্মলেন্দু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে রাস এর পরেরদিন বেরোবে ট্যাবলো।২৫বছরে পা দেওয়া শহরের স্কুল রোডের প্রীতম ক্লাবের থিম ১০০ দিনের কাজ। ক্লাবের পক্ষে চিত্তরঞ্জন মন্ডল জানিয়েছেন যে রাস্তা থেকে একটু নিচে মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে একশো দিনের কাজ করতে গিয়ে মাটি খুঁড়ে নানা ঐতিহাসিক সামগ্রী যেমন বুদ্ধ ,নটরাজ, রাধাকৃষ্ণের মূর্তির সন্ধান পায় সেই দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মণ্ডপে।কেউ মাটি করছে কেউ উদ্ধার হওয়া মূর্তি প্রণাম করছে আবার কেউ কেউ আলোকচিত্রী সেই দৃশ্য ছবি তুলছে এমন এই ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবারের দাইহাটের রাসে।গঙ্গা রাস্তার মোড়ের রেড সান ক্লাবের মন্ডপ হচ্ছে মন্দিরের আদলে।মন্দিরের বাইরে দেওয়ালে থাকছে ড্রাগন।ভিতরে দেখা যাবে মহিরাবন বধ এর দৃশ্য।
ক্লাবের সম্পাদক সুব্রত বৈরাগ্য জানিয়েছেন যে “পুজো ঘিরে বসে মেলা,নটরাজ সংগীত এবারের থিম পুতুলের দেশ।বছরের উৎসবে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ফাইবারের রংবেরঙের পুতুল আমরা আর হোগলা পাতা পাটকাঠি ঝিনুক দিয়ে।” হাউসিং এলাকার বিবেকানন্দ সঙ্গীর মূর্তি রয়েছে রাই রাজা। মন্ডপ সেজে উঠেছে বিয়ের নানান উপজাত শোলার টোপর সিঁদুরের কৌটো কুলো শোলার কদম ফুল দিয়ে।
এছাড়াও সাহাপাড়া নাগরিক মঞ্চের থিম আলিবাবা চল্লিশ চোর। গুহার আদলে তৈরি হচ্ছে মন্ডপ। নবদ্বীপ এর মত দাঁইহাট রাসে একাধিক মূর্তি দেখতে পান দর্শকরা। কোথাও রাধাকৃষ্ণের মূর্তি কোথাও কালী মাতার পুজো করে থাকেন উদ্যোক্তারা। একাধিক মূর্তির সমাবেশ ঘটে এই রাস যাত্রায়।রাসের পরেরদিন শোভাযাত্রা ঘিরে প্রচন্ড উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে এলাকাবাসীর সাথে বহিরাগতদেরও। তাই হাজারে হাজারে দর্শক ইতিমধ্যেই জমায় খেতে শুরু করেছে শহরবাসীর বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। দাঁইহাট পৌরসভার তরফ থেকেও জনস্বাস্থ্যমূলক পরিষেবা দিতে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গা ক্যাম্প করে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন কর্মীরা।স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে “কাটোয়ার যে মূল কার্তিক লড়াই ,দাঁইহাটে রাস উৎসব বাঙালির কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব তাই এলাকার মানুষ শান্তিতে রাস উৎসব পালন করবেন এই আশা রেখেছি।”
আরও পড়ুনঃ মঙ্গলকোটে বেহুলা-লখিন্দরের প্রতীকী বিয়ের অনুষ্ঠান
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584