প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার
ভিসির রুমে চড়া এসিতে বসেও দরদর করে ঘামছেন পাংশুমান ভড়। টেবিলের উল্টোদিকে দুটো চেয়ারে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার সরু চোখে জরিপ করছেন পাংশুমানের শরীরী ভাষা। আসন্ন সংকটের থেকেও পাংশুমান বেশি ভীত অন্য কারণে। তিনি ডায়াবেটিসের রুগি। এত চাপ নিতে না পেরে প্যান্ট ভিজে গেলে লজ্জার শেষ থাকবে না।
রেজিস্ট্রার নীরবতা ভাঙলেন, “দুলাল ভড়ের তাল মিছরির থেকেও পাংশু ভড়ের কেচ্ছা এখন বেশি ফেমাস! উফ!” উপাচার্য বললেন, “পড়াতে গিয়ে অধ্যাপক আর ছাত্রীদের মধ্যে একটা প্লেটোনিক সম্পর্ক অনেক সময় গড়ে ওঠে। তাই বলে একই ব্যাচের চারজন ছাত্রীকে সব সময় ব্যাগে কনট্রাসেপটিভ পিল ক্যারি করতে হবে!”
রেজিস্ট্রার বললেন, “স্যার, প্লেটোনিক মানে তো আমার প্লেট ও নিক। অত দান-খয়রাতি আবার পাংশুর পোষায় না।”
এবার পাংশু মৃদু গলায় বললেন, “স্যার, মানছি, আমার একটু ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমিও তো রক্ত-মাংসের মানুষ। স্বয়ং জন কীটসও বলেছেন, আমার স্বার্থপর প্রেম আমাকে তোমায় ছাড়া শ্বাস নিতে দেয় না।”
এবার উপাচার্য অসহিষ্ণু হতে উঠলেন, “আপনি আর কীটস-ওয়ার্ডসওয়ার্থ মাড়াবেন না তো। আপনার মুখে বটতলার সাহিত্যই বেশি মানায়।”
রেজিস্ট্রার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “পাংশু, আপনার সমস্ত হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট মেয়েরা শিক্ষামন্ত্রী আর রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমরা আপাতত ইউনিভার্সিটির এগজামিনেশন সিস্টেম থেকে আপনাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করলাম। আপনার চাকরিটা থাকবে কিনা, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।”
আরও পড়ুনঃ সাধনবাবুর মৃত্যু
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এসে আর রিক্সা নিতেও ইচ্ছে করলো না পাংশুর। কিছুদিন আগেও যে ছাত্রীরা পরীক্ষায় স্রেফ কিছু নম্বর কম পাওয়ার ভয়ে তাঁর অঙ্কশায়িনী হতো, আজ তারাই তাঁর ফোন পর্যন্ত ধরে না! আত্মহত্যার হুমকি দিতে গিয়ে পাল্টা খিস্তি খেতে হয়েছে। রাস্তার ধারে একটা হনুমান মন্দিরের সামনে থমকে দাঁড়ালেন পাংশু। হাত জোড় করে প্রণাম জানিয়ে বললেন, “সংকট-মোচন, তুমিই জীবনের সার বুঝেছিলে। তাই বাল-ব্রহ্মচারী ছিলে। এ’যাত্রায় আমায় রক্ষা করো প্রভু। এরপর থেকে বউ ছাড়া অন্য কোনও মেয়েছেলের দিকে ফিরেও তাকাবো না।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584