শিবশঙ্কর চ্যাটার্জ্জী, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
বালুরঘাটে পালিত হল ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ দিবস। ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন বোম্বাই শহরে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর ডাকে “ভারত ছাড়ো আন্দোলন” বা “ক্যুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট”-এর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। পরদিন ৯ আগস্ট থেকেই দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয়ে যায় ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো শ্লোগান।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রগুলি ছিল মহারাষ্ট্রের সাতারা, মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, দিনাজপুরের বালুরঘাট, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, অসমের নওগাঁ, ওড়িশার তালচের, বালেশ্বর ছাড়াও আর ও অনান্য এলাকায়৷ তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই আন্দোলন,এ রাজ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে এই আন্দোলন আছড়ে পড়তে বেশি দেরী হয়নি৷ কারণ তখনকার দিনের স্বাধীনতা সংগ্রামী সেনানীরা বালুরঘাট শহরের ডাংগী এলাকায় এপার এবং ওপার দুই বাংলা থেকেই আন্দোলনকারীরা এসে বালুরঘাটের দক্ষিণে আত্রেয়ীর তীরে এই ডাংগী এলাকায় জমায়েত হয়েছিলেন।
এরপরেই বিপ্লবী সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ডাংগী থেকে মিছিল করে তাঁরা বালুরঘাট শহরে পৌঁছে প্রথমে আদালত পোস্ট-অফিসে ঢুকে কাগজপত্র লুঠপাট ও আগুন ধরিয়ে দেন। সেই সঙ্গে ট্রেজারী অফিসে হামলা চালিয়ে ব্রিটিশের ইউনিয়নের জ্যাক পতাকা নামিয়ে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলিত করে বালুরঘাট ব্রিটিশ মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। ইতিহাসে বালুরঘাটের এই আন্দোলনের স্থান অখণ্ড ভারতবর্ষের নিরিখে পঞ্চম হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গড়বেতায় প্রশাসনিক বৈঠক
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ৯ আগস্ট শুরু হওয়া এই আন্দোলন এত তীব্র এবংব্যাপক রূপ ধারণ করেছিল যে ইংরেজরা এটা কল্পনাও করতে পারেনি যে তাদের সত্যি সত্যি ভারত ছাড়তে হবে।আজ সেই ডাংগীতে ওই দিনের ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্মরণে স্থাপিত বেদীতে মাল্য অর্পনের পাশাপাশি তৎকালীন সেই সব মহান বিপ্লবীদের স্মরণের মাধ্যমে জেলা কংগ্রেসের তরফে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দিনটিকে উদযাপিত করা হয়।
প্রসঙ্গত দেশের প্রাক্তন রাষ্টপতি প্রণব মুখার্জী যখন রাজ্য কংগ্রেসের নেতা হিসেবে কাজ করে ছিলেন। সেসময় তিনি একবার সেদিনের ব্রিটিশ তুমি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্মরণে সেই ডাংগী থেকে পদযাত্রায় অংশ নিয়ে সারা বালুরঘাট পরিক্রমা করে সেই সব বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আন্দোলনকে স্মরণ করে প্রণাম জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ দল বিরোধী কাজের জন্য দুই বিজেপি নেতাকে সাময়িক ভাবে সরিয়ে দিল নেতৃত্ব
বিপ্লবকে স্মরণ করা,বিশেষ করে এরকম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে বারবার স্মরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ভালো ঘটনা বারবার স্মরণ করলে জীবনে একটি নতুন উদ্দীপনা জেগে ওঠে, রাষ্ট্রজীবনকেও নতুন শক্তি যোগায়। তেমনই আমাদের নবীন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের উদ্দীপনা পৌঁছে দেওয়ার কর্তব্য আমাদেরই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ইতিহাসের একটি সোনালী পৃষ্ঠাকে, তৎকালীন পরিবেশকে, আমাদের মহাপুরুষদের আত্মবলিদানকে, কর্তব্যকে,সামর্থ্যকে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব প্রত্যেকেরই রয়েছে বলে মনে করে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব।।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584