বিশ্ব বাজারে আমসত্ব পৌঁছে দিতে সরকারী সাহায্যের আর্জি প্রস্তুতকারকদের

0
200

হরষিত সিংহ,মালদহঃ

শুধু আম নয় মালদার আমের তৈরী আমসত্বেরও খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। আমের মরশুম শেষে প্রায় বছরভোর জেলার আমসত্ব বিক্রি হয় দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বাদে মিষ্টি, সুস্বাদু এই আমসত্বের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। মূলত পাকা আম থেকে তৈরী হয় এই সুস্বাদু আমসত্ব। মালদা জেলার মূলত ইংরেজবাজার, রতুয়া, কালিয়াচক, চাঁচল সহ প্রায় প্রতিটি প্রান্তে তৈরী করা হয় আমসত্ব।চলতি মরশুমে আমের অধিক ফলন ও রোদ ঝলমলে আবহাওয়ার জেরে এবার অধিক আমসত্ব তৈরীর সম্ভবনা দেখছেন মালদা জেলার আমসত্ব প্রস্তুুতকারীরা।তবে সরকারী কোন রকম সাহায্য বা সরকারী ভাবে আমসত্ব বিক্রির কোন পরিকাঠামো না থাকায় আনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে পাইকারদের কাছে কম দামে আমসত্ব বিক্রি করেন প্রস্তুতকারীরা।

ছবিঃঅভিষেক দাস

তাই আমের মত আমসত্ব বিক্রিতেও সরকারী উদ্যোগ ও সাহায্যের দাবী তুলেছেন প্রস্তুতকারীরা।
মালদা জেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমের সুনাম। আম ও আমজাত দ্রব্য যেমন আচাড়, আমসত্ব রপ্তানি করে জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। আম থেকে উৎপন্ন আকর্ষনীয় ও সুস্বাদু খাদ্যটি হল আমসত্ব। এই খাদ্যের মধ্যে শুধুমাত্র আম দিয়েই তৈরী। কোন রকম দ্রব্যর মিশ্রণ করা হয়না। গাছে আম পাকতে শুরু করলেই জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে তৈরী হয় আমসত্ব। মূলত গোপাল ভোগ, খিরসাপাত, হিমসাগর, টিকাপুড়ি ও ফজলি সহ কিছু গুটি আমের আমসত্বের মান ও স্বাদ ভাল হয়। কারণ এই সমস্ত আম প্রচুর মিষ্টি ও আমের ভেতরে কোন আঁশ থাকেনা। যার জেরে রস প্রচুর হয় ও প্রলেপ দিতেও সুবিধা হয়। গাছে আম পাকতে শুরু করলে সেই আম দিয়ে শুরু হয় আমসত্ব তৈরীর কাজ। আমসত্ব তৈরীর জন্য মূলত দরকার কড়া সূর্যের তাপ। আকাশে রোদ দেখা দিলে পাকা আম একটি পাতলা কাপড়ে দিয়ে ঘষে রস তৈরী করা হয়। সেই রস একটি কাপড়ের গায়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। সেটিকে রোদে শুকতে দেওয়া হয়। কড়া রোদ হলে একটির মধ্যে দিনে তিন থেকে চার বার আমের প্রলেপ দেওয়া হয়। এই ভাবে সাত দিন দেওয়ার পর আমসত্ব তৈরী হয়। এক মোন আমে(৪০ কেজি) প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি আমসত্ব তৈরী হয়। মূলত মহিলারা এই কাজ করে থাকেন। ইতিকা চৌধুরি নামে এক আমসত্ব প্রস্তুতকারী জানান,তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে আমসত্ব তৈরী করছেন। এর জন্য তিনি কোন প্রশিক্ষণ নেননি। পরিবারের সদ্স্যদের কাছে তিনি শিখেছেন।ভালমানের আমসত্ব প্রস্তুতকারীরা গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। চলতি মরশুমে জেলায় ব্যাপক আমের ফলন হয়েছে। গাছ পাকা আম গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মোন দরে কিনতে হয়ছে। আনান্য বারের থেকে প্রচুর কম দামে। পাশাপাশি মালদায় এবার আবহাওয়া রোদ ঝলমলে। যা আমসত্ব তৈরীর উপযোগী। তাই সমস্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অধিক আমসত্ব তৈরী করছেন প্রস্তুতকারীরা। কারণ আমসত্ব গোটা বছর ধরে বিক্রি করা যায়। তবে আমসত্ব প্রস্তুতকারীদের আক্ষেপ সরকারী উদ্যোগে তাদের কোন ব্যবস্থা আজো হয়নি। তাই উৎপাদিত পণ্য তাদের কম দামে পাইকারদের হাতে তুলে দিতে হয় কারণ জেলায় সরকারি উদ্যোগে বিক্রির কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

ছবিঃঅভিষেক দাস

পপি দাস নামে এক প্রস্তুতকারী জানান,সরকার আমাদের সাহায্য করলে খুব সুবিধা হয়। সরকার আমাদের ঋন দেওয়ার ব্যবস্থা করলে আমরা আরো বেশি পরিমাণে তৈরী করতে পারব। আমসত্ব সরকারি ভাবে কিনলে আমরা দালাল খপ্পর থেকে বাঁচব। নায্য দাম পাব। এই বিষয়ে ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের ডাকুরিয়া গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু ইসলাম বলেন,আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দৌপাধ্যায় মালদার আম ও আমজাত দ্রব্য নিয়ে ভাবছেন। তিনি মালদার আম বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। আগামিতে আমসত্ব নিয়েও তিনি চিন্তাভাবনা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মালদায় এসে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি দালাল চক্র রুখতে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here