সিনেমাওয়ালা ঋতুপর্ণ

0
164

পল্লব দাস,ডেস্কঃএকজন মানুষ তার সাধারন থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প,গোটা জীবন টায় যেন একটা বিকাশের গল্প।অসামান্য একজন চলচিত্র পরিচালক , অভিনেতা,গল্পকার ঋতুপর্ণ ঘোষ।ঋত্বিক ঘটক,সত্যজিৎ রায়,মৃনাল সেনের পরবর্তী বাংলার নতুন ধারা আনেন ঋতুপর্ণ । জন্ম ১৯৬৩ সালে ৩১ অগাস্ট,বাবা ও মা চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন তাই ছোট বেলা থেকে শুটিং এ যাওয়ার সুযোগ হতো প্রায়। ক্যামেরা চালানো শিখে গেছিলেন নিজের চেষ্টাতেই।সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে পাস করার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে ডিগ্রি লাভ।তিনি একজন এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি। বিজ্ঞাপনে স্লোগান লেখা শুরু করেন।

ছবিঃপ্রতিবেদক

আশি’র দশকে বেশ কিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের স্লোগান লাইন লিখেছেন তার মধ্যে বরোলিন,শারদ সম্মান জনপ্রিয় হয়।ঋতুপর্ণ প্রথম বাংলা স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপনের প্রচলন করেন।আবেদন,বক্তব্য শ্রোতা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল মানুষটির।

এরপর বাংলা সিনেমা পেল তার নতুন এক কারিগর।১৯৯২ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে হীরের আংটি ছবি করেন।১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় ছবি উনিশে এপ্রিল মুক্তি পায়, বাণিজ্যিক ভাবে সফলতার সাথে সাথে এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োয়, ১৯৯৫ সালে এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায়। এরপর দহন ছবিতে দুই অভিনেত্রী হাত ধরে আসে জাতীয় পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে অসুখ বাংলা ছবি বিভাগে
পুরস্কার পায়,২০০০ সালে বাড়িওয়ালি ছবিটি নেটপ্যাক আওয়ার্ড পায় বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।এর পর ঐ সালেই মুক্তি পায় উৎসব যার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান পরিচালক,২০০২ মুক্তি পায় তিতলি।
২০০৩ সালে একটু ভিন্ন দিকে গিয়ে শুরু হয় ছবি শুভ মহরত,এটি আগাথা ক্রিস্টির দি মিরর ক্র্যাকড ফ্রম সাইড টু সাইড অবলম্বনে ঋতুপর্ণ তৈরি করেন।
চোখের বালি ছবিতে বলিউডের লাস্যময়ী নায়িকা ঐশ্বর্য রায়কে নিয়ে কাজ করেন। ২০০৪ সালে অজয় দেবগন ও ঐশ্বর্য রায় কে নিয়ে তৈরি হয় প্রথম হিন্দী ছবি রেনকোট।এই ছবিটিও জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।এরপর ২০০৫ এ অন্তরমহল মুক্তি পায় , এই ছবি তে অভিনয় করেন জ্যাকি শ্রফ , অভিষেক বচ্চন,সোহা আলি খান সহ অনেকেই।২০০৭ সালে দ্য লাস্ট লিয়ার মুক্তি পায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বিগ বি অমিতাভ বচ্চন ।২০০৮ মুক্তি পায় খেলা আর সব চরিত্র কাল্পনিক এই ছবিটি ও জাতীয় পুরস্কার এর সংখ্যা বাড়ায় আর একবার।মাইলস্টোন তৈরি করছিল প্রায় প্রত্যেক ছবি।২০০৯ সালে আবহমান ছবিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।অভিনয়ে খ্যাতি লাভ করেন যীশু সেনগুপ্ত ,অনন্যা চ্যাটার্জি সহ শিল্পীরা। মৃত্যুর আগে ঋতুপর্ণ তাঁর পরবর্তী ছবি সত্যান্বেষী’র শ্যুটিং শেষ করেছিলেন। চিত্রাঙ্গদা তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি এটি বিশেষ জুড়ি পুরস্কার পায়।অভিনয়েও অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তিনি।’দেই থিল্লি মা কু’নামে এক ওড়িয়া ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন,এরপর কৌশিক গাঙ্গুলির ‘আরেকটি প্রেমের গল্প ‘ ,সঞ্জয় নাগের ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’চিত্রাঙ্গদাতে নিজ অভিনয় পারদর্শিতায় মুগ্ধ করেছেন দর্শক দের।
১৯৯২ -২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বল্প সময়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ ১৯ টি অনবদ্য ছবি উপহার দেন চলচ্চিত্রপ্রেমী দের আর তার মধ্যে ১২ জাতীয় পুরস্কার ও ১৭টা আওয়ার্ড পান।
এছাড়াও টেলিভিশন সেলিব্রিটি টক শো ঘোষ এন্ড কোম্পানি সঞ্চালন করেন।ফিল্ম ম্যাগাজিন আনন্দলোক সম্পাদনা করেন ১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত।

ছবিঃপ্রতিবেদক

শুধু চলচিত্র পরিচালনা বা অভিনয় নয় মানুষটি গল্প বলতে পারতো শেখাতে পারতো বোঝাতে পারতো ,শিল্পের কারিগর ছিল ঋতুপর্ণ । মাত্র ৪৯ বছরের স্বল্প জীবনে একগুচ্ছ উজ্জ্বল শিল্প উপহার দিয়ে গেছেন।সংকীর্ণ সমাজের মানসিকতা মাঝে মাঝে বাক্য বাণে বিদ্ধ করে তাঁকে তবে অসামান্য প্রতিভাবান এই শিল্পী সবের উর্ধ্বে ছিলেন থাকবেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here