পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন,সব কাটমানি ফেরত দাও।চব্বিশ ঘণ্টা কাটেনি দিদির নির্দেশের।এর মধ্যেই কাটমানি ফেরতের দাবিতে শুরু হয়ে গেল তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ।আবার শুরুটা হল খোদ অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূম থেকেই।
বুধবার দুপুরে ইলামবাজার থানার শ্রীচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের সদস্য উত্তম বাউড়ি এবং বুথ সভাপতি রাজীব আকুরের বাড়ি ঘেরাও করল গ্রামবাসীরা।দাবি একটাই, দিদি যা বলেছেন তাই। যা নিয়েছ,ফেরত দাও।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের টাকা লুঠ করেছেন ওই দুই শাসক দলের নেতা।এক মহিলা বলেন,“আমাদের ঘর হয়নি।আর ওরা কারও থেকে সাত হাজার, কারও থেকে আট হাজার টাকা নিয়ে নিজেরা পেল্লাই বাড়ি করেছে।” ওই গ্রামবাসীরাও নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করেছেন।পঞ্চায়েত সদস্যর বাড়ির দরজায় তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম বাউড়ি বলেন,“আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।আমি কোনও প্রকল্পের টাকা নিইনি।”
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন,“এ বাবা এরকম হয়েছে নাকি!আমি তো শুনিনি।দাঁড়ান খোঁজ নিয়ে বলছি”।
পরে অনুব্রত বলেন,“এটা বাউড়িপাড়ার ঘটনা।এখানে কিছু সিপিএমের লোকজন আছে।তারাই মদ খেয়ে হাঙ্গামা করেছে।”
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি খাওয়া নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন।অনেকেই যে বিভিন্ন সরকারি কাজে ২৫ শতাংশ করে কমিশন নেয় সে খবর তাঁর কাছে আছে বলে জানিয়েছিলেন দিদি।এমন কী ‘সবার বাড়ি’ প্রকল্পের আওতায় গরিব মানুষকে সুবিধা করে দেওয়ার নাম করেও অনেকে টাকা তুলেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।
নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন, এবার এদের সবাইকে টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।সেই সঙ্গে এও বলেন,কারও অধিকার নেই সরকারি কাজের বা সাধারণ মানুষের প্রাপ্য টাকা নেওয়ার।মমতার কথায়, কন্যাশ্রী থেকে সবুজসাথী সব প্রকল্প থেকেই অনেকে কাটমানি খাচ্ছে।এমনকী মৃতদেহ সৎকারের সমব্যথী প্রকল্পের ২০০০ টাকা থেকেও ২০০ টাকা কেটে নিচ্ছে অনেকে।
শহরের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বললেও,আসলে যে দিদির বার্তা সার্বিক তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারও।স্থানীয় স্তরে দুর্নীতি যে এ বারের ভোটে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ তা বুঝেছেন মমতা। স্বীকারও করেছেন দলে চোর-ছ্যাঁচড়দের বাসা হয়েছে। এবং স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন,চোরেদের তিনি দলে রাখবেন না।
আরও পড়ুনঃ বন্ধ স্টেশনে প্রবেশের পথ,ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ কর্ণসুবর্ণে
পর্যবেক্ষকদের মতে,বুধবার ইলামবাজারে যা হল তা সাংঘাতিক।এই ঘটনা ছোঁয়াচে হলে গ্রাম-মফস্বলে শাসক দলের বহু নেতাকে স্থানীয় মানুষের অসন্তোষের মুখে পড়তে হতে পারে।বাড়ি ছাড়া, গ্রাম ছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584