প্রীতম সরকার
‘রজনীগন্ধা’ ছবির জন্য যখন নতুন মুখ খুজছেন বাসু চট্টোপাধ্যায়, অনেক নায়ক তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে বাসু চট্টোপাধ্যায় এমন একটি গল্প সিনেমার জন্য বেছেছিলেন, সেটি ছিল মাত্র একপাতার। আর এই একপাতার গল্প নিয়ে তখন যে সব নায়কদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাঁরা কেউই বাসুর সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হননি।
অবশেষে নায়ক চেয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। সেটা ১৯৭৪ সাল। যোগাযোগ হয় মারাঠি নাটকের এক নায়ক আমোল পালেকরের সঙ্গে। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাসুকে। দুজনের সিনেমা সুপার হিট। ‘রজনীগন্ধা’ ছবিতে বাসুর পরিচালনায় আমোল পালেকরের নির্মল হাসি মধ্যবিত্তের সরল অথচ সংশয়াকীর্ন চেহারার ব্যক্তিত্ব দর্শকের মন ভরিয়ে দিয়েছিল।
একপেশে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন- এর লার্জার দ্যান লাইফের বানিজ্যিক ছবি দেখতে দেখতে যখন সকলে ক্লান্ত, তখন মধ্যবিত্ত জীবনের দ্বিধাজড়িত, কিন্তু চেনা সরলতার ছবি একদম নতুন দমকা হাওয়ায় মতো ছুঁইয়ে গিয়েছিল হিন্দি ফ্লিমের জগতকে। সেসময় আংরি ইয়ংম্যান অমিতাভ বচ্চন, অন্যদিকে জিতেন্দ্রের নাচ-গান, রাজেশ খন্নার রোমান্টাসিজম, এসবের মধ্যে বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ‘রজনীগন্ধা’ এমন খুশবু ছড়িয়েছিলে, যে সেটা আর বন্ধ হয়নি।
এই ধরনের কম বাজেটের ছবি, যেখানে ফূটে উঠেছে ভারতীয় মধ্যবিত্ত জীবন- তা করে গিয়েছেন এই প্রবাসী বাঙালী চিত্র পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়। নাচ-গান-মারামারি- থ্রলারের পাশাপাশি মানুষকে হাসতে শিখিয়েছেন। এই দীর্ঘজীবনের পথে পাড়ি দেওয়া “‘ছোটী সি বাত’ নহী”। নিজের ছবির সঙ্গে বিখ্যাত করেছেন অমোল পালেকর, ওমপুরি, নাসিরুদ্দিন, স্মিতা পাটিল, শাবানা আজমির মতো নায়ক- নায়িকাদের। প্রথম জীবনে নিজে ছিলেন মূম্বই এর এক ট্যাবলয়েডের কার্টুনিষ্ট।
চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরুর আগে রাজ কাপুর ও ওয়াহিদা রহমান অভিনীত ‘তিসরি কসম’ ছবিতে তিনি বাসু ভট্টাচার্য-এর সহকারী হিসাবে কাজ করেন। ‘তিসরি কসম’ ১৯৬৬ সালে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে । বাসু চট্টোপাধ্যায় প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘সারা আকাশ’ (১৯৬৯) । এই ছবিটির জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান তিনি । তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমাগুলি হল ‘সারা আকাশ’, ‘পিয়া কে ঘর’, ‘খাট্টা মিঠা’, ‘চক্রব্যুহ’, ‘বাতো বাতো মে’, ‘জিনা ইহা’,’আপনে পেয়ারে’। দূরদর্শনে প্রচারিত জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ এবং ‘রজনি’ -ও তাঁরই পরিচালনা।
চিরাচরিত হিন্দি ছবির দর্শক যেমন ভুলতে বসেছিলেন হাসতে, আজ আবার বলিঊড ভুলে গিয়েছে হাসি। আজ মৃত্যু হয়েছে বাসু চট্টোপাধ্যায়ের। ১৯৩০ সাল থেকে রাজস্থানের আজমেড় থেকে চলা পথ আজ দুপুরে শেষ হলো মুম্বই এর সান্টাক্রুজ শ্মশানে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584