এলাকাবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলেও সংশয় মিন চাষিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে

0
37

সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগনাঃ

‘ইট ভর্তি বাঁশ পিনের খাঁচা’ দিয়ে বাঁধ নির্মানের পলি সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মিন শিকার। ফলে জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে প্রত্যন্ত সুন্দরবনবাসীদের মধ্যে।

villagers demand fulfillment | newsfront.co
শুরু হতে চলেছে বাঁধ তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিনের মানুষের দাবি ছিল স্থায়ী নদী বাঁধের। নদীর প্রবল স্রোতে ক্ষয়ে যেতে শুরু করে পলিমাটি, যার জেরে অনায়াসে ভেঙে পরে বরচুড়া নদীর ভাড়াতলা বাঁধ। বরচুড়া নদীর ভাড়াতলা বাঁধ নিয়ে প্রতি বছর সংশয় তৈরি হতো সাধারণ মানুষদের মধ্যে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদী বাউন্ডারি ভেঙে বিপদের মুখে পড়তে হতো চারটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষদের ।

villagers demand fulfillment | newsfront.co
সেচ দফতরের কর্মী, সেখ আব্দুল মন্ডল। নিজস্ব চিত্র

একদিকে নদী ভাঙনের বিপদগ্রস্ত জনজীবন। অন্যদিকে নোনা জলে প্লাবিত চাষের জমিতে আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হতো রামগঙ্গা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষদের। পরিবর্তনের পর বাঁধ নির্মাণের প্রত্যাশা দিয়েছিল বর্তমান সরকার। সেই প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে আজ বাস্তবায়িত হতে চলেছে রামগঙ্গা গ্রামের ভারাতলা নদী বাঁধ।

আরও পড়ুনঃ সোশ্যল মিডিয়ায় প্রাণনাশের হুমকির বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল

villagers demand fulfillment | newsfront.co
তৈরি হচ্ছে ইঁট দিয়ে ভিত গঠন। নিজস্ব চিত্র

দক্ষিণ সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামগঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম রামগঙ্গা। গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে বড়চুরা নদীর ভারাতলা নদী বাঁধ। এই বাঁধ ভাঙলে ক্ষতি হবে চারটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের । একদিকে রামগঙ্গা, মহেন্দ্রপুর, গোবিন্দপুর, আর অন্যদিকে গোবিন্দরামপুর।

আরও পড়ুনঃ অবৈধ দখলদারি রুখতে নির্দেশ পর্যটন মন্ত্রীর

villagers demand fulfillment | newsfront.co
বালির বস্তা দিয়ে সাময়িক স্রোত আটকানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র

এই চার গ্রামের মানুষদের জীবিকা চাষাবাদ। তাছাড়া গুটিকয়েক মাছের ভেড়ি, রয়েছে অর্থকারী ফসল পান। প্রতি বছর মুহূর্তে ভাড়াতলা বাঁধ ভেঙে সমস্যায় পড়তে হতো সাধারণ মানুষদের। খেটে খাওয়া মানুষদের অন্যতম জীবিকা নদীতে মিন ধরে জীবিকা নির্বাহ করা।

villagers demand fulfillment | newsfront.co
মিন চাষিদের সঙ্কটময় অবস্থা। নিজস্ব চিত্র

ভাড়াতলা নদীতে রিং বাঁধের কাজ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হতো সাধারণ মানুষদের মধ্য । এবার অন্যরুপে নির্মিত হচ্ছে বাঁধ। বাঁশের পিনের খাঁচা দিয়ে নির্মিত বাঁধে হাত লাগিয়েছে সেচ দফতর ।

আরও পড়ুনঃ বড়ঞার কড়ালিতলা ব্রীজে ধস

ভাড়াতলা বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০০মিটার । ৫০০ মিটার কাজ হয়েছে বাঁশের পিনের খাঁচা দিয়ে। বড়চুড়া নদীতে ট্রলার আর মিন ধরার কারণে নদীতে তৈরি হয়েছে ক্ষোর, যার ফলে অনায়াসে ভাঙছে বাঁধ। সে কারণে নতুন পলি গড়তে প্রোকোপাইন নামক বাঁধ গড়ছে সেচ দফতর।

min farmer | newsfront.co
মিন চাষি। নিজস্ব চিত্র

প্রথমে বাঁধ থেকে ২০ মিটার নদীতে ফেলা হবে বাঁশ পিন দিয়ে নির্মিত খাঁচা, যার মধ্যে এক একটা খাঁচায় থাকবে আশিটি করে ইট। প্রথমে বাঁশের তৈরি খাঁচা ১০টি সারি করে, চারটে খাঁচা ফেলা হবে নদীর ক্ষোরে। যেখানে গভীরতা অনেক বেশি সেই জায়গায় ফেলা হবে এগুলো।

villagers  | newsfront.co
এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র

তারপর তিনটি সারিতে বাঁধ থেকে পেনের মিটার দুরত্বে আরও নয়টি পাট করে খাঁচা ফেলা হবে। বাকি দশ মিটার বাঁধ থেকে দুরে আরও দুটি পাট করে চারটি করে খাঁচা ফেলা হবে, যা জলের স্রোতকে রোধ করবে। জল স্রোত বাঁধের কাছে কম হলে পলি স্তর পড়বে, যার ফলে চুড়া আকারে পলি সংগ্রহ হবে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর।

আরও পড়ুনঃ বিধাননগরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল মাল বোঝাই লরি, আহত চালক

নতুন পলি সংগ্রহ হলে সেখানেই গড়া হবে বন সৃজন । সেটাকে ঘিরে রিং বাঁধের উপর হবে কংক্রিটের স্থায়ী নদী বাঁধ। এমন খবরে খুশি গ্রামের মানুষ, কিন্তু সবচেয়ে সমস্যা মিন চাষিদের, কারণ যে বাঁশ দিয়ে খাঁচা তৈরি করে বাঁধের কাজের জন্য চরের স্তর তৈরি করা হচ্ছে সেখানে ঘটেছে বিপত্তি।

বাঁশের মধ্যে মিন চাষিদের জ্বাল জড়িয়ে ক্ষতি হচ্ছে। ফলে জীবিকা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে। ইতি মধ্যে বাঁশের পিনের খাঁচায় পলিস্তর পড়তে শুরু করেছে বড়চুড়া নদীর ভাড়াতলা বাঁধে। ফলে বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেলেও মিন ধরা নিয়ে জীবিকা সংগ্রহে প্রত্যন্ত বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে প্রশ্ন চিহ্ণ দেখা দিয়েছে।

শীত পড়লে বড়চুড়া নদীতে দেখা মেলে মিন ধরার কাজ। চলতি বছরে তার পরিমাণ অনেক কমেছে । বাঁধ করতে গিয়ে জীবিকা সংগ্রহে বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে বলে মনে করছেন প্রত্যন্ত এলাকাবাসী।

সরকারি ভাবে অন্য জীবিকায় সহযোগিতা চেয়েছেন মিন চাষিরা। সব অবসান কাটিয়ে দীর্ঘদিনের আতঙ্ক ভুলতে বসেছে বাঁশের পিনের তৈরি খাঁচায়, যা আগামীতে পলি পড়ার পর কংক্রিটের নদী বাঁধের স্বপ্ন দেখছেন প্রত্যন্ত এলাকাবাসী।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here