সুদীপ পাল,বর্ধমানঃ
ভাদু গান মানকর সংলগ্ন অঞ্চলে অন্যতম লোক সংস্কৃতি সম্পদ। কৃষি নির্ভর রাঢ়ের এই গ্রামগুলি বর্ষার অবসানে শরতের ভাদ্র মাসে ভাদু উৎসবে মুখর হয়ে উঠত।সময়ের ব্যবধানে এখন ভাদু উৎসব অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে। রাজনন্দিনী ভাদু রাঢ়ের কূলবধূ।জনশ্রুতি, মানভূমের অন্তর্গত কাশীপুরের রাজনন্দিনী হলেন ভাদু।তাঁর রূপ সৌন্দর্য ছিল ঈর্ষণীয়। বিয়ের পর ভাদুর অকাল মৃত্যু ঘটে।তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ভাদু উৎসব ও ভাদু গানের সূচনা।ওই উৎসব চলে সারা ভাদ্র মাস জুড়ে।ভাদুর আসরে রাখা হয় রাজকন্যা ভাদুর একটি কল্পিত মাটির মূর্তি। অন্য মতে,বিয়েে করতে আসার সময় ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও বরযাত্রী ডাকাত দলের হাতে খুুুন হন। একথা শুনে চিতার আগুনে আত্ম বিসর্জন দেন ভদ্রাবতী।সেই ঘটনা মনে রেখে ভাদু গানের সূূচনা।
আগে ওই গানের আসরে ব্যবহৃত বাদ্য যন্ত্র ছিল ঢোল আর জুড়ি।সময়ের দাবি মেনে এখন সংযোজিত হয়েছে হারমোনিয়াম,ক্যাসিও এবং তবলা।কথায় আর সুরেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। অনুপ্রবেশ ঘটেছে ছায়াছবির গানের সুরেরও।কেবল তাই ই নয়,ভাদুকে কোথাও কোথাও ছয়াছবির নায়িকাদের সঙ্গেও তুলনা করা হয়।ভাদু গানের বিষয়বস্তু তাঁর কুমারী জীবন,ইচ্ছা, আকাঙ্খা,অভিপ্রায়, বিয়ে,বেদনা বিধুর করুণ অকাল মৃত্যু এবং সাম্প্রতিক আঞ্চলিক কিছু ঘটনা ও বৈশিষ্ট্য। কিন্তু স্মার্ট ফোন, টিভি, আইপডের দাপটে ভাদুর মতো লোকসংস্কৃতির ধারাটি সংকটের মুখে। অমরারগড়ের মন্মথবন্ধু ঘোষ বলেন,ডিজিটাল এই জীবনে যে ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ভাদু তাতে এক দিন লুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা! অথচ একসময় রাঢ়দেশীয় গৃহবধূরা ভাদুকে প্রণাম করে স্বামীর মঙ্গল কামনা করতেন।
ভাদু গানে ধরা পড়ে সামাজিক ছবি, কোথাও আবার মজা করে গাওয়া হয়
“আমার ভাদু সোনার জাদু,কে পঠাইলে কোলকেতা,সেই কোলকেতারই লুনা জলে,ভাদু হইল শ্যামলতা।”নিত্যদিনের অভাব অনটনের ছবি ধরা পড়ে ভাদু গানে “মরদ গেছে কয়লা খাদান,ঘরকে ফেরে নাই,আমরা আছি রুখা পেটে,খাবার জোটে নাই।”
আরও পড়ুনঃ পূর্বস্থলীতে ভাদু পুজো ঘিরে উদ্দীপনা
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584