দেশের জন্য রাস্তায় নামুন

0
230

মইনুল হাসান

প্রকৃতিতে এখন পরিবর্তনের ঋতুকাল। ক্রমেই রোদ চড়া হচ্ছে। রঙ ও প্রকাশ পাচ্ছে প্রকৃতি ও রাজনীতিতে। রাস্তার ধারে শিমুল পলাশ যেমন রঙের বাজার দেখাচ্ছে তেমনই রাজনীতির আঙিনাও রঙে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আর মেরে কেটে ১৫ মাস বাকি। তার আগেই ছিল দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিধান সভা নির্বাচন।সব চাইতে বড় অঘটন হয়েছে বামপন্থীদের ত্রিপুরা পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। গত নির্বাচনে যাদের ১ শতাংশ ভোট পেতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল তারা এবার ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গড়েছে। জোট করে ভোট পেয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। বিজেপির ডগমগ হবার যথেষ্ট কারণ আছে। দিল্পীর দীনদয়াল রোডের পেল্লাই অফিসে কাড়ানাকাড়া বাজিয়ে ঘন্টাধিক কাল ধরে ভাষণ দেওয়ার হেতু ছিল। বসন্তোৎসব পালনের একেবারে যুতসই পরিবেশ সন্দেহ নেই। সপ্তাহ পার করে সারা দেশের পরিস্থিতি বিজেপি’র কাছে এত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তা কল্পনাও করা যায় নি। তাই কিন্তু হলো। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুটি লোকসভা আসন ত্যাগ করেছেন। বিহারে ২টি বিধানসভার নির্বাচন হয়ে গেল। এই নির্বাচনগুলো নিরামীষ ছিল না। সারা দেশে এর বিরাট প্রভাব পড়েছে। গোরখপুর ও ফুলপুরের জেতা আসন বিজেপি হেরে গিয়েছে। গোরখপুর আসনে যে বুথে যোগী আদিত্যনাথ ভোটার সেখানে বিজেপি মাত্র ৪৬টা ভোট পেয়েছে। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি জোট করে লড়ছে। তাতেই বিজেপি কুপোকাত। এই দুটো দল কিন্তু সরকার বিরোধী। কোনমতেই একাসনে বসে না। তারাও বুঝে গিয়েছেন বিজেপি কে না হারাতে পারলে দেশের বিপদ।গুজরাটের ভোট একটা বার্তা তাতে কোন সন্দেহ নেই। মানুষ ঠিক করলেন আরও কড়া বার্তা পাঠানো দরকার। শিশুঘাতীদের ক্ষমা নেই। সুতরাং যারা একাসনে বসে না এমন দল জোট করলো এবং মানুষ তাদের জিতিয়ে দিল।
এখন বোঝা যাচ্ছে যে বিগত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে (উত্তরপ্রদেশ) বি জে পি যে বিপুল জয় পেয়েছে তার প্রধান কারণ বিরোধীদের অনৈক্য। সর্বনিম্ন কর্মসূচীতে একমত হলেই হিন্দুত্ববাদীদের সব জারিজুরি শেষ হয়ে যাবে। বিহারেও তাই। একটা আসনে বিজেপি জিতেছে কিন্তু জেলে থেকেও লালু যে এখনো লালু আছেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
কেউ তো অস্বীকার করতে পারছেন না যে দেশের সামনে সবচাইতে বড় বিপদ RSS। যার কাজ বিজেপি করছে। যাদের হাতে ইতিমধ্যেই দেশের বহুত্ববাদ, সহিষ্ণুতা ফর্দাফাই হয়ে গিয়েছে।যারা হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। যারা একটা সমান্তরাল সেনাবাহিনী নামিয়ে দিতে শুরু করেছেন। গোপনে নয় প্রকাশ্যে। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী RSS-এর এমন ঘৃণ্য কার্যধারাকে সরাসরি সমর্থন করছেন। পিছন থেকে রাষ্ট্র প্রধানের সমর্থন আছে।হারাতে হবে RSS তথা বিজেপি কে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বামপন্থীরাও জানেন তাদের যা অবস্থা তাতে একা লড়ে হবে না। কমিউনিষ্ট পার্টি বাদে অন্যান্য বামপন্থীদের অবস্থা খুবই খারাপ।সুতরাং শুধু বাম, বৃহত্তর বাম বিষয়টি আলোচনা মাত্র।হ্যাঁ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। জাতীয় বা আঞ্চলিক দল সেই মনোভাব নিয়ে আছে। কে কেমন ধর্ম নিরপেক্ষ তার বিচার করার জন্য বামপন্থীরা যদি কষ্টিপাথর হাতে নিয়ে ঘুরতে থাকেন তাহলে ঐক্য নষ্ট হবে-মানুষের প্রতি অসম্মান দেখানো হবে। নীতির প্রশ্ন আসবে, ন্যুনতম কর্মসূচীর কথা আসবে। সেটাই স্বাভাবিক। এখন ন্যুনতম কর্মসূচিই বৃহত্তম কর্মসূচীতে রুপান্তরিত হয়েছে। তাহলো দেশরক্ষা।
মনে করার কারণ নেই বামপন্থীদের শর্তে অন্যরা সবাই রাজি হবে। অথবা অন্যদের শর্তে বামপন্থীরা রাজি হবে। তাহলে পথ কি? সেই পথটাই দেখিয়ে দিয়েছে ফুলপুর ও গোরখপুরের জনগণ।নিজেদের প্রাত্যহিক হিসাব নিকাশগুলোকে সরিয়ে রেখে দেশরক্ষার কাজে নিজেদের যুক্ত করার সময় এসেছে। আমাদের নিজস্ব বাদ্‌ বিসম্বাদ, অহেতুক তর্কবিতর্ক যদি অত্যধিক সময় নষ্ট করে তাহলে নতুন গতিপ্রাপ্ত হয়ে ফ্যাসিবাদ দেশ দখল করবে-তখন বির্তক করার সময়টুকুও থাকবে না। সুতরাং সময় নেই। রাস্তায় নামতে হবে দেশের জন্য- মানুষের জন্য।

প্রাক্তন সাংসদ

মতামত লেখকের নিজস্ব

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here