শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
আঁকশি লাগিয়ে টেনে গাড়িতে তোলা হচ্ছে একের পর এক ১৪ টি মৃতদেহ। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ১০ জুন গড়িয়া শ্মশানের সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় শিউড়ে উঠেছিল রাজ্যবাসী। মৃতদেহের প্রতি ওই অমানবিক আচরণের খবর প্রকাশ্যে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সুযোগ ছাড়েননি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল কলকাতা পুরনিগমের প্রশাসককে তলব করে এব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। এবার গড়িয়া শব-কাণ্ডে রাজ্য সরকার, কলকাতা পুলিশ ও পুরসভার কাছ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট চাইল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আর এই তথ্য পেয়েই উচ্ছ্বসিত ট্যুইট করলেন রাজ্যপাল।
গড়িয়া মহাশ্মশানে পচাগলা দেহ আঁকশিতে করে টানার ভয়াবহ দৃশ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। জনৈক বিপুল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন।@MamataOfficial এর মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে।(1/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) July 1, 2020
জানা গিয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন জনৈক আইনজীবী বিপুল চট্টোপাধ্যায়। গত ১৭ জুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে এই বিষয়ে অভিযোগ জমা করেন। ওই দিন গড়িয়া শ্মশানে ১৩ থেকে ১৪ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মৃতদেহ অত্যন্ত অমানবিক ও দায়িত্বহীনভাবে সৎকার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব, কলকাতা পুর কমিশনার ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে গোট ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনে বিষপান, ৪ দিন চিকিৎসার পর জ্যেষ্ঠ সন্তান-সহ মৃত্যু রিজেন্ট পার্কের বৃদ্ধার
আর এই পরেই বুধবার রাতে রাজ্যপাল ট্যুইট করে বলেন, গড়িয়া মহাশ্মশানে পচাগলা দেহ আঁকশিতে করে টানার ভয়াবহ দৃশ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। জনৈক বিপুল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে। সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশি সন্ত্রাস, দুর্নীতি কাণ্ডে এবার আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ পুরসভা-স্বাস্থ্যভবনকে জানিয়েও হেনস্থা, বাড়ির ফ্রিজে ২ দিন পড়ে রইল করোনা রোগীর লাশ
রাজ্য প্রশাসনের যে সব অফিসার রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছেন, তাঁদের আইনের সামনে দাঁড়াতে হবে। মহামূল্যবান গণতন্ত্র রক্ষায় কোনও সমঝোতা নয়। প্রসঙ্গত, স্থানীয়রা ওই মৃতদেহগুলি করোনা আক্রান্তদের বলে দাবি করলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভা জানিয়েছিল, গড়িয়া লাশ-কাণ্ডের সঙ্গে করোনা সংক্রমণের কোনও যোগ নেই।
কিন্তু করোনা সংক্রামিত হোন বা না হোন, পশুর মতো ওভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া অমানবিক বলে দাবি করে রাজ্যপাল বলেন, ‘ওই মৃতদেহগুলি কোভিড আক্রান্তদের কিনা সেটা আসল প্রশ্ন নয়। সেটা তো প্রমাণ সাপেক্ষ। আসল বিষয় হল, মৃতদেহ কি ওভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়! পশুদের সঙ্গেও ওরকম কেউ করে না। এই ঘটনাকে খাটো করে দেখাতে যাঁরা নানান কথা বলছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করছি, ভেবে দেখুন তো ওঁরা কেউ যদি আপনার কাছে কেউ হত? নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন।’ এবার জাতীয় মানবধিকার কমিশনের জবাব তলবে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি রাজ্যপাল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584