ভোটের ফল পাল্টে দিতে চাপ! ট্রাম্পের ফোন কলের অডিও রেকর্ড ফাঁস

0
93

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার জন্য জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেটকে টেলিফোনে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট রবিবার ফাঁস করল সেই ফোন কল। তোলপাড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে।

Donald Trump | newsfront.co
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ জানুয়ারি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাঁদের দীর্ঘ ফোনের সেই কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করেছে। সেই ফোনালাপের সূত্র ধরে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেক্রেটারি অব স্টেটকে ১১ হাজারের বেশি ভোট কোনোভাবে খুঁজে বের করার জন্য বারবার বলছেন।

অডিওতে শোনা যায় ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, ক্ষুব্ধ জর্জিয়ার জনগণ, আমেরিকার লোকজনও ক্ষুব্ধ। আবার গণনা করা করে ‘ভোট পাওয়া গেছে’ বলার মধ্যে কোনো ‘ভুল নেই’ বলে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে টেলিফোনে বলছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প ফোনে বলছিলেন, ‘আমি এই একটা জিনিসই চাইছি-কোনোভাবে ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করা।“ ঠিক এই সংখ্যক ভোট চাওয়ার কারণ হল, তাহলে জো বিডেনের চেয়ে এক ভোট বেশি পেয়ে জর্জিয়ার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন। এমনিতে নির্বাচনে তিনিই জয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বলতে শোনা যায় যে, প্রেসিডেন্ট ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। রাজ্যের ভোট একাধিকবার গণনা করা হয়েছে। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় নতুন ভোট খুঁজে পাওয়ার কাজ যে তিনি করবেন না, এমন কথা বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেন ব্র্যাড রাফেনসপারজার।

আরও পড়ুনঃ নাটকীয় মোড় মার্কিন রাজনীতিতে! ১১ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের পক্ষে

এমনকি ট্রাম্প একথাও উল্লেখ করেছেন যে, রিপাবলিকান পার্টির লোকজন ব্র্যাড রাফেনসপারজারের ওপর অসন্তুষ্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এমন ব্যবহার রিপাবলিকানরা নাকি মেনে নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ায় দুই সিনেট নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন। যদি জর্জিয়ার সেক্রেটারি অফ স্টেট তাঁর কথামতো কাজ করেন তাহলে রিপাবলিকান পার্টির নেতারা সেক্রেটারি অব স্টেটকে ‘খুবই শ্রদ্ধা’ করবেন বলে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজয় মানতে পারছেন না কোনোভাবেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো জাতীয় নির্বাচনের পর যা কখনো ঘটেনি, এমন বিভিন্ন কান্ড ঘটিয়েই চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একের পর এক মামলা করেছেন। প্রায় ৫০ টির ওপর মামলা করলেও, তার একটিকেও কেউ আমল দেয়নি।

সুপ্রিম কোর্টও ট্রাম্পের নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবির শুনানিতেই রাজি হননি। শেষে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা নিয়ে আপত্তি জানানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। নিজের সমর্থক আইনপ্রণেতাদের চাপ দিচ্ছেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ফোনালাপের অডিও এমন একটি প্রমাণ, যাতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে অধস্তন রাজ্য কর্মচারীদের ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এর আগে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ব্রায়ান কেম্পকেও এমন চাপ দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ নিখোঁজ চিনের ধনকুবের, জ্যাক মা

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রথমে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাঁর প্রশংসা করতে থাকেন,এতেও কাজ না হওয়ায় অপরাধের ভুয়া অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি দেন। ফোনালাপের একপর্যায়ে ট্রাম্প বলে বসেন, ব্র্যাড রাফেনসপারজার খুব বড় ঝুঁকি নিচ্ছেন।

রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর এবং সেক্রেটারি অব স্টেট-দুজনই রিপাবলিকান। তাঁরা প্রেসিডেন্টের সরাসরি চাপ সত্ত্বেও নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি। একই কাজ করেছেন পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনাসহ বেশ কিছু রাজ্যের কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ, হুমকি ও প্রলোভনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপর্যায়ের এসব কর্মকর্তা।

গতকাল ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তা দেওয়া হয়। সেখানে ব্র্যাড রাফেনসপারজারর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি জানান ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষ্য, ব্র্যাড রাফেনসপারজার নির্বাচনসংক্রান্ত জালিয়াতি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুনঃ টেক্সাসের গির্জায় বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত যাজক

তবে ব্র্যাড রাফেনসপারজার পাল্টা টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হচ্ছে মি, প্রেসিডেন্ট, আপনি যা বলছেন, তা ঠিক নয়। সত্য বেরিয়ে আসবে।’ ফোনালাপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করে সিএননসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো ই-মেইলের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি হোয়াইট হাউস থেকে।

ট্রাম্পের এই কাজ যে শুধু অনৈতিক তা নয়, একে আইনবিরুদ্ধ বলেও মনে করছেন মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞরা। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক রিচার্ড এইচ পিলডেজ বলেন, প্রেসিডেন্ট হয় জেনেশুনেই রাজ্য কর্মকর্তাদের অনিয়ম করতে উৎসাহিত করছিলেন অথবা কী বলছেন, তা তিনি নিজেই জানেন না।

অন্যদিকে, সিনেটর টেড ক্রুজসহ অন্যরা দাবি জানাচ্ছেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে কি না, তা একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত করা হোক। সে পর্যন্ত ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল স্থগিত থাকবে। ভোটে অনিয়ম পাওয়া গেলে রাজ্য আইনপ্রণেতাদের ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সিনেটে ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা চার্লস শুমার গতকাল বিকেলে বলেছেন, সিনেটর টেড ক্রুজ এখন ভোট কারচুপি নিয়ে তদন্ত করতে ইচ্ছুক। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি লিংক উল্লেখ টুইটবার্তায় চার্লস শুমার কটাক্ষ করেন, সিনেটর টেড ক্রুজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে কাজটির সূচনা করতে পারেন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here